কাঠবাদামের ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঠবাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আমরা জানবো।কাঠবাদামে রয়েছে ওমেগা 3ভাটি এসিড,ভিটামিন ই,পটাসিয়াম,মাগনেসিয়াম,কালসিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। আমরা আরো জানবো প্রতিদিন কয়টা কাঠবাদাম খাওয়া উচিত।
কাঠ বাদামের উপকারিতা সীমাহীন।পুষ্টিগুনে ভরপুর এই কাঠ বাদাম,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়,ওজন নিয়ন্ত্রণ করে,চুল ও স্কিনের জন্য খুব উপকারী।এইসব কিছুর তথ্য জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কাঠবাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
গুণে ভরা কাঠবাদাম, ড্রাই ফুড এর মধ্যে জনপ্রিয় একটি খাবার হচ্ছে কাঠবাদাম। কাঠবাদাম খাওয়ার অভ্যাস হয়তো অনেকেরই আছে আবার অনেকেরই নাই তবে আমাদের উচিত প্রত্যেককে কাট বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। কেননা কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফরফরাস, মিনারেল এবং ভিটামিন যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃজলে ভেজানো কাঠবাদাম নিয়মিত খেলে ওজন খুব তাড়াতাড়ি কমে।কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।ফলে কয়েকটি কাঠবাদাম খেলেই অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছে জাগে না।আর কম খেলেই যে ওজন কমবে তা আমাদের সকলেরই জানা।তাই ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত কাঠবাদাম খেতে পারেন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃকাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে হজম কমাতে বৃদ্ধি পায়।কাঠ বাদামের যে খোসা থাকে তা তৈরি হয় এক ধরনের উৎসোক দিয়ে। তাই যখন কাঠবাদাম ভিজানো হয় তখন এর আদ্রতার জন্য বাদামের খোসা নরম হয়ে যায়। ও বাদামের মূল অংশটিও বেশ নরম হয়ে যায়।
এমন বাদাম খেলে খাবার খুব সহজে হজম হয়ে যায়।আসলে ভেজানো কাঠবাদামে এক ধরনের উচ্চ সোখ থাকে যা লাইপেজ নামে পরিচিত।যা ফ্যাট ও অন্যান্য খাবারের উপাদান সহজেই হজম করতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃযারা কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য খুব কষ্ট পান তাদের জলে ভেজানো কাঠবাদাম খাওয়া উচিত।কারণ কাঠবাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণে আশ বা বা ফাইবার।অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবারের মতো কাঠবাদাম ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে সাহায্য করে।তবে কাঠবাদাম খাওয়ার সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
প্রতিদিন কয়টা কাঠবাদাম খাওয়া উচিত
গুনে এবং পুষ্টিতে ভরা কাঠবাদাম,আমরা এতক্ষন সকলেই জানতে পেরেছি যে কাঠবাদামের কি কি উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু তাই বলে যে প্রতিদিন মুঠো মুঠো কাঠবাদাম খেয়ে যাবেন তা তো হবে না। কাঠবাদাম খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। আমরা যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে কাঠবাদাম খেতে পারি তাহলে তা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের উপকার কাজ করবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিন কতটুকু কাঠবাদাম খেলে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী বা আমরা খেতে পারি? প্রতিদিন ৬ থেকে ৮টি কাটবাদাম আমরা ভিজিয়ে খেতে পারি। এতে শিশুদের জন্য মেধা শক্তি ও বুদ্ধি বিকাশের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই কাঠবাদাম।
ডায়াবেটিস/সুগারঃডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে মূল সমস্যাটা হয় ইন্সুলিনের ক্ষেত্রে।কারো ক্ষেত্রে ইনসুলিন একদমই তৈরি হয় না,কারো ক্ষেত্রে আংশিক তৈরি হয়।আবার আরেকটি পয়েন্ট হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স,এই তিনটে সমস্যার ক্ষেত্রে কিন্তু কাঠবাদাম খুব সুন্দর কাজে দেয়।
আমাদের শরীরে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কে কমাতে সাহায্য করে,বা টিসুর মধ্যে ইনসুলিন বাড়াই,যথার্থ পরিমাণে ইনসুলিন ক্ষরণে সাহায্য করে। এইজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঠবাদাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ওজন কমানোর জন্যঃযাদের শরীরে ওজন খুব বেশি ৭০ কিলো ৮০ কিলো,পেটের মধ্যে চর্বির লেয়ার খুব পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাদের জন্য কাঠবাদাম খুব গুরুত্বপূর্ণ।কারণ এর মধ্যে ক্যালোরি পরিমাণ খুব কম থাকে,যখন আপনি নিয়মিত কাঠবাদাম খাবেন।এরমধ্যে ক্যালোরি কম থাকার কারণে আপনার পেটের মধ্যে চর্বি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
স্কিনের সমস্যাঃযাদের চামড়ার বিভিন্ন রকম রোগ আছে, ব্রণ,ফোড়া,দাগ ছোপ ইত্যাদি সমস্যার ক্ষেত্রে কাঠবাদাম অত্যন্ত কার্যকারী।কারণ এর মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে ভরপুর মাত্রায় এবং ভিটামিন ই থাকে।এগুলো আমাদের স্কিনের বিভিন্ন সমস্যাগুলিকে দূর করতে অনেক সাহায্য করে।যাদের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে, অল্প বয়সে বয়স্ক দেখায় তাদের জন্য প্রতিদিন কাঠবাদাম খাওয়া দরকার।
কাঠ বাদামের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি
কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে হাইড্রোকার্বন যা অতিরিক্ত খেলে আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।তাছাড়া হাইড্রোকার্বন এসিড শরীরে বেশি জমে থাকলে শ্বাসকষ্ট সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের খাবার গিলতে সমস্যা হয় যেমন ছোট শিশু এবং কিছু বয়স্ক মানুষ তাদেরকে এই শুকনো কাঠবাদাম খেতে না দেওয়াই ভালো।
নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনকারীঃযারা এন্টিবায়োটিক সেবন করছেন বা নিয়মিত রক্তচাপের ঔষধ খান,তাদের উচিত কাঠবাদাম খাবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।কারণ প্রাকৃতিক ভাবে এই বাদামে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।মাত্র এক মুষ্টি কাঠ বাদামে মিলতে পারে০.৬গ্রাম মেগানিস।যার শরীরের দৈনিক চাহিদা ২৭ শতাংশ।ফলে অতিরিক্ত মেগানিস শরীরে প্রবেশ করলে এন্টিবায়োটিক ওষুধের ক্ষমতা কমাতে পারে।
যাদের বাদামে এলার্জি আছেঃযেকোনো ধরনের বাদামে যে কোন ধরনের এলার্জি থাকলে তার কাঠবাদাম এড়িয়ে চলাই ভালো।এলার্জির কারণে শরীরে চুলকানি ও ত্বকের বিভিন্ন অংশে চাকা হওয়া ফুলে উঠা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে।
কাঠবাদামের উপকারিতা গুলো
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
- হাড় ও দাঁত ভালো রাখে।
- পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
- কোষের খমতা বৃদ্ধি পায়।
- শক্তি বাড়ায়।
- রোগ পতিরোধ খমতা বাড়ায়।
- ওজন নিয়ন্তণের সহায়তা করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্তণ করে।
- ডায়বেটিস পতিরোধ করে।
- হার্টের সুস্থতায় সহায়ক।
ভেজানো কাঠবাদাম উপকারিতা কি কি
কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ম্যাগনেসিয়াম ভিটামিন ই পটাশিয়াম ইত্যাদি। নিয়মিত ভেজানো কাঠবাদাম খেলে হদ রোগের ঝুঁকি কমায়।এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে অনেক সাহায্য করে। নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে হাট ভালো থাকে। এজন্য সারারাত কাঠবাদাম ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন এতে করে ক্ষুধা কম লাগবে। খাওয়াও কম হবে তাই দেহের বাড়তি ওজন কমতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখেঃকাঠ বাদামের সবথেকে শক্তিশালী গুন হচ্ছে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে এটি খুব দক্ষ।কাঠ বাদামে ভিটামিন ই, পটাশিয়াম থাকার কারণে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে কাঠবাদাম খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন।
যৌন শক্তি বাড়ায়ঃকাঠ বাদামে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মনসাচুয়েটেড ফ্যাট আছে।যা শরিলে উপকারী ক্যারোস্টোরেল ফ্যাট আছে।যার শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যারোস্টোরেল তৈরি করে।সেক্স হরমোন গুলো ঠিকমতো কাজ করার জন্য ক্যারোস্টোরেল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।তাছাড়া এই খাবারগুলি জিংকের অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস,এই জিংক টেস্টোসরেল মাত্রা বাড়া।
এবং যৌন ইচ্ছা বাড়াতেও এর কার্যকারিতা অনেক।প্রায় সব ধরনের যৌন শক্তি বাড়ায়।তবে সঠিক নিয়মে প্রতিদিন সকালে কাঠবাদাম খেলে এর কার্যকারিতা পাওয়া যায়।শুধু তাই নয় যৌন শক্তি ধরে রাখতে এই কাঠবাদাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকৃত কোন সমস্যা না থাকলে আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য কোন প্রকার ওষুধের প্রয়োজন নেই। তার জন্য প্রতিদিন কয়েকটি কাঠবাদাম যথেষ্ট। তাই দীর্ঘ স্থায়ী যৌবন চাইলে নিয়মিত কাঠবাদাম খেতে পারেন।
কাঠ বাদাম খেলে কি ওজন বাড়ে?
বাদামের প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। বিভিন্ন ধরনের বাদামে প্রতি 100 গ্রামে 550 থেকে 650 ক্যালোরি পাওয়া যায়।যা স্বাভাবিক অন্য খাবারের তুলনায় অনেক বেশি,কেননা বাদামে রয়েছে বেশি অংশ জুড়ে ফ্যাট।গবেষণা বলে প্রায় সব বাদাম কে স্বাস্থ্যকর বলেছেন। বাদামে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাট থাকলেও তাতে রয়েছে আনসেচুুরেটেড ফ্যাট।
প্রোটিন,ফাইবার,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম,অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এর ভালো উৎস।যা আপনার স্বাস্থ্য কে সুস্থ করতে ভালো কাজ করে।নিয়মিত বাদাম খেলে তাতে পাবেন ফাইটোস্টোরল যা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার সাথে ওজন বাড়ার তেমন কোন সম্ভব নেই।
বরং এটি ওজন কমাতে অনেক পরিমাণ ভূমিকা রাখে।কাঠবাদাম উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার হলেও আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। যখন আপনি বাদাম খাবেন তখন আপনি দীর্ঘ সময় ধরে ভরপেট অনুভব করবেন।অর্থাৎ বাদাম ভোজনের পরিপূর্ণতা বৃদ্ধি করে অন্য খাবার খাওয়ার আগ্রহ কমে যাবে। আর এই কম খাওয়ার আগ্রহর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
লেখক এর মন্তব্যঃ
কাঠ বাদামের অনেক অনেক রকমের উপকার রয়েছে। এই কাঠবাদাম ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই কাঠবাদাম যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে।চিকিৎসোরা বলেন,এক গ্লাস পানির মধ্যে কয়েকটি কাঠবাদাম সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা খোসা ছাড়িয়ে টানা এক সপ্তাহ খেতে পারলে অসাধারণ সব উপকারিতা পাবেন।তাছাড়া বাজারে অনেক ধরনের লবণযুক্ত বাদাম পাওয়া যায়, স্বাস্থ্যের জন্য লবণযুক্ত বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধব ও ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url