আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম
চুল পড়া বন্ধ সহ চুল ঘন ও কালো করতে আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম গুলো কি।আর সেটা যদি আমরা নিজের হাতে তৈরি করতে পারি,আর যদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে পারি তাহলে ভালো একটি ফলাফল অল্প দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে।আমলকি প্রায় দেশের সব জায়গায় দেখা যায়,ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি,এর উপকারিতা পেতে প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত?
এই ফলটি সকলের কাছে ওষুধি ফল হিসেবে পরিচিত।ফলটিতে রয়েছে অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি আর তাই আমলকিকে বলা হয় ভিটামিন সি এর রাজা।ভিটামিন সি এর অভাবে যে সকল রোগ হয়, আমলকি খেলে জাদুকরি উপকার পাওয়া যায়।তাই আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম জানতে হলে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
ভূমিকাঃ
শীতের আমেজ পড়া মাত্রই আমলকি বাজারে দেখা যায়।আমলকি এমন একটা ফল এর দাম কম হলেও এর উপকারিতা আমরা গুনে শেষ করতে পারবো না।তাই আমলকি বা ইন্ডিয়ান ঘুষবেরি কে সুপার ফুড বলে মানা হয়।সেই প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আমাদের বিভিন্ন রকম চুলের সমস্যায়,ত্বকের সমস্যায়,হার্টের সমস্যায়,ডায়াবেটিসের সমস্যায়,ব্যবহার করা হয়,তাছাড়া চুল পড়া বন্ধ করতে চুল ঘন করতে আমলকির রস তুলে দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত
আমলকির ইন্ডিয়ান নাম হলো Indian gooseberry আমলকি কে অমৃত ফল বলা হয়।এই টক জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও এনটিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর।হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
- রক্ত পরিষ্কার রাখতে
- হৃদযন্ত্র মজবুত রাখতে
- খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে
- দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
- চুলের গ্রোথ বাড়াতে
আমলকির অবদান অতুলনীয়,আজকে আমরা এই আর্টিকেলে জানবো আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম, ও প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত?আমলকি হচ্ছে প্রকৃতির একটি বড় উপহার।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিভিন্ন এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান,ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,ভিটামিনA,ভিটামিনB ইত্যাদি।
এক গবেষণায় জানা যায় এক গ্লাস কমলালেবুর রসে আছে যে পরিমাণ ভিটামিন সি আছে, তার চাইতে বেশি ভিটামিন সি থাকে এক গ্লাস আমলকির রসে।অন্য কোন ফলের থেকে আমলকিতে ভিটামিন সি এর অবদান অনেক বেশি।এবার জেনে যাওয়া যাক প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত? একজন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী নির্ভরশীল।
আরো পড়ুনঃঅ্যালোভেরা চুলে মাখলে কি হয়।
সাধারণভাবে দুই থেকে তিনটি ফল সারাদিনে খাওয়া যায়। যারা অনেক রকম শাকসবজি মিশিয়ে খান তাদের জন্য একটি ফলি যথেষ্ট। টাটকা ফল ধুয়ে পরিষ্কার করে হাওয়ায় বেশি উপকার পাওয়া যায়।আমলকির রসের বদলে এদিকে ফল হিসেবে চিবিয়ে খেলে এতে থাকা ফাইবার শরীরে যুক্ত হয়,যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সহযোগিতা করে।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গাছ গাছালি থেকে যে ওষুধ তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় কৃষ্ঠষৌধী।এবং ধাতু ও খনিজ থেকে যে ওষুধ তৈরি করা হয় তাকে রসৌষধী বলে।এই দুই ধরনের ওষুধ এই আমলকি ব্যবহার করা হয়। এমনকি আমলকিকে রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ চুল যখন শুষ্ক শুষ্ক হয়ে যায় তখন আমলকির রস চুলের ব্যবহার করলে চুলের জীবন ফিরে পাওয়া যায়।
আমলকির পেস্ট চুলে লাগালে চুল কালো ঘন ও চকচকে দেখায়।আমলকি আয়ু বৃদ্ধি, জ্বর কমাতে, কাশি নিরাময় ও কষ্টের অব ভালো করতে অনেক সাহায্য করে। গুজবেরি হজমজনিত রোগ এবং জন্ডিসের জন্য ব্যবহৃত হয়।আমলকি আপনি প্রতিদিন খেতে পারেন, এবং এর কোন রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
বরং আছে দারুন সব উপকার প্রতিদিন ভিটামিন ট্যাবলেট না খেয়ে খেতে পারেন একটি করে আমলকি।এই সামান্য আমলকি আপনার দেহের জন্য বিশেষ সব উপকার করবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিন একটি করে আমলকি খেলে কি উপকারিতা পাবেন।
- আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
- আমলকি চুলের খুশকির সমস্যা দূর করে এবং পাকা চুল প্রতিরোধ করে।
- আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করে, এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম দূর করতে দারুন উপকারি।
- এক গ্লাস দুধ বা পানির সঙ্গে আমলকির গুড়াঅ চিনি মিশিয়ে দিনে দুইবার খেতে পারলে এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারলে ত্বকের কালো দাগ সহ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
- আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, তাছাড়া চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ, চোখ চুলকানি বা পানি পড়ার সমস্যা ভালো হয়।
খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
টক ও তেতো স্বাদে ভরা আমলকি গুনে মানে অতুলনীয়। ফলটি শুধু ভিটামিন ও খনিজ উপাদানেই ভরপুর না, বিভিন্ন রোগ দূর করতেও রয়েছে অসাধারণ শক্তি।আমলকির জুশ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সর্দি কাশি ঠেকাতেও অনেক সাহায্য করে।
আমলকি থেকে সবচেয়ে কার্যকারী উপকারিতা পেতে হলে আমলকির জুস করে খেতে হবে।প্রতিদিন খালি পেটে এই জুস খেলে হজম ভালো হয়। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে, মুখের ঘা এর পাশাপাশি সর্দি কাশি দূর করতে আমলকির জুস দারুন ভাবে কাজ করে।২চা চামুচ জুসের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে ঠান্ডা কাশি দূর হয়।
মুখের ঘা দূর করতে কয়েক চামচ জুস পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুইবার গড়্গড়া করলে উপকার পাওয়া যায়।নিয়মিত আমলকির জুস খেলে শরীরে কোলেস্টরেল মাত্রা কমে, এমিনো এসিড ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় হৃদ যন্ত্র ভালো থাকে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এজমা দূর করতে আমলকির জুস অনেক কার্যকারী।
কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমলকি ভিষজ গুনে অনন্য একটি ফল।এর ফল ও পাতা বিভিন্ন ওষুধে ব্যবহার করা হয়।আমলকির গুনাগুনের জন্য আয়ুর্বেদিকে ওষুধেও আমলকি নির্যাস ব্যবহার করা হয়।তো চলুন জন নেওয়া যাক কাঁচা আমলকি ও আমলকির রস খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।
ডাইবেটিসঃ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম পরিমাণ আমলকির রসের সাথে একটি পাকা কলার সাথে সামান্য চিনি মিক্স করে সকাল এবং সন্ধ্যা বেলায় খেতে পারলে ডায়াবেটিস রোগের হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
অনিদ্রা রোগঃ প্রতিদিন রাতে খাওয়ার পর ঘুমাতে যাবার আধা ঘন্টা আগে আমলকির রস বা কাঁচা আমলকি খেলে অনিদ্রা রোগ দূর হয়।
মেয়েদের ঋতু স্রাব জনিত সমস্যাঃ২৫ গ্রাম আমলকির রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে মেয়েদের ঋতুর স্রাব জনিত সমস্যা দূর হয়।
আমলকি খাওয়ার সঠিক সময়
আমলকিতে কমলার চেয়ে ২০গুণ এবং আপেলের চেয়ে ১২০গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে।একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে ফিট থাকতে প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার হয়,যা একটি আমলকি থেকে খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব হয়। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস আমলকির জুস দূরত্ব ওজন কমাতে সহায়তা করে।
এছাড়া আমলকের অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচিয়ে সারাদিন শরীরের শক্তি যোগাবে।আমলকি কোন নিয়মে খেতে হবে, কোন সময় খেতে হবে চলুন জেনে নিই।ব্লেন্ডারে দশ টির মত আমলকি নিন, এরপর এক গ্লাস পানি ঢালুন, এর সাথে সামান্য একটু আদা ও একটি গোলমরিচ মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন।
এরপর ছেকে নিয়ে স্বাস্থ্য উপকারী আমলকির জুস পান করুন।চাইলে এক চিমটি লবণ ও এক চা চামচ মধু মেশাতে পারেন।তাছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ আমলকির পাউডার মিশিয়ে পান করুন,সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা
চুল পড়া বন্ধ এবং চুল ঘন ও কালো করতে আমলকির তেল অনেক উপকারি।আমলকির তেল বিভিন্ন ভাবে তৈরি করা যায়, তবে আমি যে নিয়মটি বলবো তা চেষ্টা করলে ইনশাল্লাহ ভালো ফলাফল পাবেন।কিছু সংখ্যক আমলকি নিবেন, ভালো করে কেটে বিচি অংশ ফেলে দিয়ে মাংসের অংশ নিবেন।যাদের বাসায় ব্লেন্ডার রয়েছে তারা পেস্ট আকারে তৈরি করবেন।
যাদের বাসায় ব্লেন্ডার নেই তারা শিল পাটায় থেঁতো করে নিবেন, থেঁতো করে নেওয়ার পরে তার মধ্যে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম নারকেল তেল দিবেন।১০ মিনিট চুলায় গরম করে নিবেন,কিছুক্ষণ ঠান্ডা করার পরে ছেকে আমলকির ছাঁবাগুলো ফেলে দেওয়ার পরে একটি কাঁচের বোতলে রেখে দিবেন।
সপ্তাহে তিন দিন চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ব্যবহার করলে অল্প দিনের মধ্যেই চুল পড়া বন্ধ সহ চুল কালো ও ঘন করবে।প্রাকৃতিক ভাবে আপনার চুল কন্ডিশনার হবে, চুল অনেক সিল্কি হবে, চুলের প্রান ফিরে পাবে।
আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম
আমরা এখন একটি সহজ ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানব। যা মাত্র এক সপ্তাহ এক সপ্তাহ ব্যবহার করলে চুল ঘন কালো ও লম্বা হবে।এই উপায়টি চুল তো ঘন হবেই তার সাথে পাকা চুল কালো করতে এবং চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে অনেক সাহায্য করবে।এটি তৈরি করার জন্য আমলকি লেবু ও নারিকেল তেল লাগবে।প্রথমে আমলকি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন, তারপর একটি ব্লেন্ডারে এর পেস্ট তৈরি করে ছাকনির সাহায্যে ছেঁকে নিন।
এর মধ্যে দু চা চামচ লেবুর রস দিয়ে, তারপর সবশেষে দু চামচ নারিকেল তেল দিতে হবে। খুব ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে পরিষ্কার তুলার সাহায্যে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন,পাঁচ মিনিট আঙ্গুলের সাহায্যে মাসাজ করতে হবে। 30 মিনিট লাগিয়ে রেখে দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন,কন্ডিশনার লাগিয়ে আপনার চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন।এভাবে এক সপ্তাহ লাগাতে পারলে ভালো একটা উপকার পাবেন।
শেষ কথাঃ
আর্টিকেলটি পড়ে আমরা অবশ্যই জানতে পেরেছি আমলকি অসাধারণ একটি ফল। যা আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে। কাঁচা আমলকিতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিপূর্ণভাবে থাকে যা আমাদের চুল বৃদ্ধি করতে দ্রুত কাজ করে।আমলকির রস চুলের গোড়ায় ব্যবহার করলে মাথার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই যারা চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন তারা অবশ্যই আমলকি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধব ও ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url