কোরবানি না দিলে কি গুনাহ হবে?

প্রিয় পাঠক, আপনি কি জিলহজ মাসের গুরুত্ব জানতে চাচ্ছেন।মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে জিলহজ মাসের আমল গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং পছন্দনীয়, এমনকি জিহাদের চাইতেও বেশি হাদিসে এসেছে।এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো কুরবানী না দিলে কি গুনাহ হবে,কোরবানির সুন্নতগুলো কি কি।
কোরবানি না দিলে কি গুনাহ হবে?

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০দিনের শপথ করেছেন।তো চোলুন জেনে নেওয়া যাক কুরআন হাদীসের আলোকে জিলহজ মাসের আমল গুলো আমরা কিভাবে করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট অর্জন করতে পারি ও তার প্রিয় বান্দা হতে পারি।

কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে জিলহজ্ব মাসে প্রথম ১০ দিনের শপথ করেছেন।এ মাসটি আল্লাহ তায়ালার কাছে এতো পছন্দনীয় হওয়ার কারণ হচ্ছে,যত মৌলিক ইবাদত আছে সব মৌলিক ইবাদত গুলোর একটি সমন্বয় করেছেন জিলহজ্জ মাসের এই প্রথম 10 দিনে।যা বছরের অন্য কোন সময় পাওয়া যায় না।

এ দশ দিনের মধ্যে সালাত আছে, নফল সিয়াম আছে,সাদাকাহ আছে,কোরবানি আছে,হজের প্রসঙ্গ টা আছে,যা বছরের অন্য কোন সময় এগুলো হয় না।এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন এই দশ দিনে যেন আমরা বেশি বেশি ইবাদত করি,পাশাপাশি তাহালিল,তাকমীল,তাকবীর দিয়ে এ দশ দিন কে মুখরিত করে রাখি এই আদেশ করেছেন।

এ দশ দিনে আমরা যেন বেশি বেশি সুবাহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার এই জিকির গুলো বেশি বেশি করি।

কোরবানি না দিলে কি গুনাহ হবে

প্রথম মাসালাঃপ্রথমে জেনে নেওয়া যাক কুরবানী কাদের ওপর ওয়াজিব।সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ব্যক্তি, নেশাব পরিমাণ মালের মালিক যদি ১০-১১-১২জিলহজ্ব সূর্য অস্তের আগে, যদি কেউ যাকাত দিতে হয় যে নেশাব হইলে,ওই নেসাবের মালিক এই তিন দিনে মধ্যে কুরবানী করা ওয়াজিব।

দ্বিতীয় মাসালাঃসাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ভরি রুপা।আবার যদি কারো কাছে কিছু স্বর্ণ ও কিছু রুপা আছে কিছু টাকা-পয়সাও আছে,এসব গুলো মিলিয়ে যদি সাড়ে৫২তুলা রুপার পরিমাণ টাকা হয়।তাহলে তার ওপরও কুরবানী করা ওয়াজিব।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো যদি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করে তাহলে সে যেন ঈদগাহে নামাজে না আসে।(মুস্তাদে আহমেদ ১৬ নং খন্ড ১২০ নং পিষ্ঠা)আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত

আকারে ও আয়তনে ইবাদতের সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে রমজান মাস।এ রমজান মাস সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি।যে মানুষ কোনদিন নামাজ পড়ে না সে মানুষও রমজান মাস আসলে একটু হলেও নামাজ কালাম আমল করার চেষ্টা করে।তার কারণ আমরা জানি যে এটা রমজান মাস।কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত জানি না বললেই চলে।তো চলুন জেনে নেওয়া যাক এই দশ দিনের আমল গুলো কি কি?
  • বেশি বেশি করে আল্লাহ তাআলার জিকির করা।
  • সালাত ভালো কাজ মানুষের উপকারএ কাজগুলো বেশি বেশি করা।
  • অন্যান্য সময় আমরা যে সব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকি,সে গুনাগুলো থেকে আরো বেঁচে থাকার জন্য বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
  • যাদের উপর হজ ফরজ হয়েছে তারা হজ করবেন এই দশকে।
  • এই দশকের ঈদের দিনে কুরবানী করা।
  • যিনি কুরবানী করবেন তিনি জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর চুল নখ সহ শরীরের অবঞ্চিত রুম কাটবেন না, কুরবানী করা পর্যন্ত।
  • এ দশকে বেশি বেশি তাকবীর তাহলিল তাহমিদ পড়া।
  • এ তাকবীর জিলহজের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে,জিলহজ এর ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক নামাজের পরে নারী-পুরুষ সবাই এ তাকবীর পাঠ করবেন।
  • আরাফার দিনে রোজা রাখা।
  • ঈদের দিনে সমস্ত সুন্নাত গুলো পালন করা।

জিলহজ্জ মাসের রোজা কয়টি

নফল রোজার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতপূর্ণ রোজা হচ্ছে আরাফার দিনে রোজা রাখা।আরাফার দিনে রোজা রাখার সম্পর্কে সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে,আরাফার দিনে কেউ রোজা রাখলে তার এক বছর পূর্বের এবং এক বছর পরের গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন।অন্য কোন নফল রোজার ক্ষেত্রে এত বিশাল ফজিলত এর কথা বলা হয়নি।তাই আমরা যারা হজে যেতে পারিনি তারা অবশ্যই আরাফার দিনে রোজা রাখর চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

জিলহজ্জ মাসের তাকবীর 

الله اكبر الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله الله اكبر الله اكبر ولله الحمد

বাংলায় উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।

অর্থঃ আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

হজ্জের দিনের আমল

সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোন,একজন মুমিনের কাছে বছরের যেকোনো দিনের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিন হচ্ছে আরাফার দিন।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এই দিনে যত জাহান্নামীকে মুক্তি দিয়ে থাকেন,বছরের অন্য কোনদিন আল্লাহ তায়ালা এত মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন না।যারা আরাফার ময়দানে অবস্থান করছে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম অনেকগুলো আমলের কথা বলেছেন।

আর যারা আরাফাত দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থান করছেন না দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে রয়েছে হজ করছেন না।তাদের জন্য আরাফার দিনে বিশেষ আমল হচ্ছে,যারা হজ করছেন না আরাফার দিনে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে নফল রোজা রাখা।

কুরবানির সুন্নত সমূহ

কুরবানী অর্থাৎ ঈদুল আযহার সুন্নতগুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলোঃ
  • ভোররাতে তাড়াতাড়ি উঠে ফজর নামাজ মহল্লার মসজিদে আদায় করা ও ঈদগাহে আগে আগে আসা।
  • ঈদের দিন মিসওয়াক করা সুন্নাত।
  • ঈদের দিন সুন্দর করে গোসল করা।
  • সুগন্ধি ব্যবহার করা।
  • সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরিধান করা।
  • ঈদগাহে আসার সময় উচ্চস্বরে তাকবীর বলা।
  • ঈদগাহে আসার আগে কোন কিছু না খাওয়া এবং কুরবানীর মাংস প্রথম খাওয়া।
  • সাধ্য অনুযায়ী দান সাদকা করা।
  • আনন্দিত ও খুশি থাকা।
  • ঈদের নামাজ খোলা মাঠে ঈদগাহে পড়া।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠাক, আমরা তো জীবনে চলার পথে পদে পদে গুনা করে থাকি। এই গুনাহগুলোকে মাফ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে স্পেশালি দশ দিন সুযোগ দিয়েছেন।এই জিলহজ মাসের প্রতিটা রাতকে আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদর বানাইয়া পেশ করবেন।আমরা যারা এটাকে কাজে লাগাতে পারব আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের সোয়াব দিবেন।অতএব শত ব্যস্ততার মাঝেও আল্লাহমুখী হয়ে আমরা এ আমল গুলোর করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধব ও ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url