তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন - শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক আপনি কি কিভাবে মাছ চাষ করতে হয় এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আজকের এই পোস্টে আমরা জানাবো তেলিয়ে তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন এবং কিভাবে মাছ চাষ করলে অল্পতেই বেশি লাভবান হওয়া যায় ও শতক প্রতি মাছ ছাড়া্র নিয়ম সহ মাছ চাষ সম্পর্কে আরো বিভিন্ন তথ্য।
আপনি যদি তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন এবং শতক প্রতি মাছ ছাড়া নিয়ম এ সম্পর্কে না জানেন।তাহলে অবশ্যই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন হয়।
কোন মাছ চাষে লাভ বেশি
যারা নতুন মাছ চাষ করার কথা ভাবছেন তাদের মাথায় সব সময় একটি প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে তা হচ্ছে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি।বাংলাদেশের অনেক মাছ চাষিরা ব্যবসা করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।মাছের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের চাষীরা সঠিক কৌশলে মাছ চাষ করে অনেক লাভজনক হচ্ছেন।বেশিরভাগ চাষিরা পুকুরে চাষাবাদ করছে। চলুন জেনে নি অল্প খরচে কোন মাছ চাষে বেশি লাভ হয় এমন কয়েকটি সবচেয়ে লাভজনক মাছের প্রজাতি।
চিংড়িঃবাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম লাভজনক মাছ হচ্ছে চিংড়ি মাছ। চিংড়ি মাছের চাহিদা বিশ্ববাজারে অনেক এবং উপাদান ভালো বৃদ্ধি পাচ্ছে।এ মাছটি রোগ প্রতিরোধকারী এবং পরিবেশের সাথে মিলতে পারে।তাই অন্যান্য মাছের তুলনায় এ মাছ চাষে খরচ কম হয় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভালো আয় করা সম্ভব।
পাঙ্গাস মাছঃবাংলাদেশে পাঙ্গাস মাছকে সাধারণভাবে চাষ করা যায়। এবং এর চাহিদা বাজারে দিন দিন বেড়েই চলেছে।পাঙ্গাস নোনা জল ও মিষ্টি জল দুই পরিবেশেই চাষ করা যায়। পাঙ্গাস হচ্ছে ক্যাটফিশের একটি জাত যা ফলন দেই অনেক বেশি এবং উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
রুই মাছ চাষঃস্থানীয় মিঠা পানির মধ্যে রুই মাছ লাভজনক একটি প্রজাতি। রুই মাছ খুব দূরত্ব বড় হয় এবং পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাজারে বিক্রি করা যায়।এবং রুই মাছের বাজার মূল্য অন্য মাছের তুলনায় বেশি। রুই মাছকে চাষ করা অন্য মাছের তুলনায় খুব সহজ।বাংলাদেশে মাছের মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক মাছ ধরা হয় রুই মাছকে।
তেলাপিয়া মাছঃবাংলাদেশের মাছ চাষীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ তেলাপিয়া।উষ্ণ পানির মধ্যে এ মাছের প্রজাতি খুব দূরত্ব বৃদ্ধি পায় এবং বংশবিস্তার করার ক্ষমতা অনেক বেশি।এ মাছ চাষের খরচ অন্য মাছের চেয়ে কম এবং তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব।
তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন
অল্প খরচে তেলাপিয়া মাছ পুকুরে কিংবা দীঘিতে চাষ করতে পারবেন।তেলাপিয়া মাছ চাষের ক্ষেত্রেও বেশি লাভজনক বলে জানা যায়।এই মাছের চাহিদা বাজারের মধ্যে অনেক ভালো,লাভের পরিমাণঅনেক ভালো বলে জানান মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
আরো পড়ুনঃ কীটনাশক ব্যবহারের ৫টি সুফল ও কুফল।
চাষের ক্ষেত্রে এ মাছটি অন্য মাছের তুলনায় খরচ অনেক কম এবং বিক্রির ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণও বেশিবলে জানান তারা।ড.এ এইচ এম কহিনুর বলেন,তেলাপিয়া মাছ চাষে 1.5 লক্ষ টাকা খরচ করে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা লাভ করা সম্ভব।
শীতে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি
মাছের খাদ্য গ্রহণ শীতকালে কমে যায়, তাই মাছের বৃদ্ধি ও কম হয়।শীতকালে প্রয়োজন মাছের অধিক পরিচর্যার।বাণিজ্যিক মাছের চাষ করেন যারা, তারা শীতকালে পুকুরকে ভালো করে শুকিয়ে পরের বছর মাছ চাষ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন।পুকুরের পানিতে শীতকালে রোদ কম সময় পড়ার কারণে পানিতে তাপমাত্রা কম পায়।
তাই শীতের সময়ে সাধারণত মাছের চলাফেরা কম হয়।সাধারণত ১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার নিচে রুই,মোগল,কাতলা এজাতীয় মাছ খাদ্য গ্রহণ কম করে। যার ফলে এই সময়ে মাছের বৃদ্ধি হয় না।
শীতের সময় কোন মাছঃএই সময় আমুর কার্প,সাইপ্রিনাস কার্প,সিল্ভার কার্প,গ্লাস কার্পপ্রজাতি মাছ চাষের উপযুক্ত একটা সময়।৪-৫ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও এসব প্রজাতির মাছ খাদ্য গ্রহণ করে এবং খুব দূরত্ব বৃদ্ধি পায়।এই মাছের ডিম ও পোনার দাম কম এবং এরা মৃত্যুবরণও কম করে।
শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম
অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশে মাছ চাষের গুরুত্ব অতুলনীয়। প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য ৬০% পুরণ করা হয় মাছ থেকে। সেজন্য সঠিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।তাই শতক প্রতি কত মাছ ছাড়বেন তা আগে জানতে হবে।তাই চলুন জেনে নিই শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম সম্পর্কে।মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে শতকপ্রতি 50 থেকে 60 টি মাছ ছাড়া যায়।
পুকুর প্রস্তুতিঃ
- সূর্যের আলোয় কুকুরকে সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত শুকিয়ে নিন।
- প্রতি শতকে ১ থেকে ২ কেজি চুন প্রয়োগ করুন।
- চুল প্রয়োগের ৭ দিন পর পানি ভর্তি করুন।
- গোবর দিবেন প্রতি শতকে ৬ থেকে ৭ কেজি।
- ইউরিয়া দিবেন প্রতি শতকে ১৬০ থেকে ২০০ গ্রাম।
- টিএসপি দিবেন প্রতি শতকে .৮০ থেকে ১০০ গ্রাম।
- পানির রং সবুজ হয়ে গেলে পোনা ছাড়ুন।
- আপনার গ্রামে কোন মাছের চাহিদা বেশি তা নির্বাচন করুন।
- শতক প্রতি সঠিক সংখ্যায় মাছ ছাড়া অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- রুই মাছ ২৫ থেকে ৩০ টি।
- সিলভার কাপ ২৫ থেকে ৩০টি।
- কাতলা মাছ ২০ থেকে ২৫ টি।
- তেলাপিয়া মাছ ৯০ থেকে ১০০টি।
- পাঙ্গাস মাছ ৪০ থেকে ৫০টি।
- গ্লাস কাপ ১৫ থেকে ২০ টি।
কোন মাছ তাড়াতাড়ি বড় হয়
মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন রুই,কাতলা,মুঘল,সিলভার কাপ এ সব মাছের চাহিদা বাজারে ব্যাপক রয়েছে।এই মাছগুলি রোগে আক্রান্ত খুব কম হয়,খুব দূরত্ব বড় হয়,এদের খাদ্য ও জায়গার জন্য কোন সমস্যা হয় না এরা পানির মধ্যেও থেকে খুব সহজেই প্রাকৃতিক খাদ্য নিশ্চিত করতে পারে।এই মাছগুলো খেতে যেমন খুব সুস্বাদু তেমনি পুকুরের পরিবেশও খুব ভালো থাকে।
পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশে পুকুর বা দিঘিতে পাঙ্গাস মাছ চাষের জন্য খুব উপযোগী।বাণিজ্যিকভাবে পাঙ্গাস মাছের সাথে বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। যেমনঃ শিং,গলদা চিংড়ি,কৈ,মাগুর ইত্যাদি।আসুন জেনে নিই পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষের পদ্ধতি -
স্থানঃপাঙ্গাস মাছ চাষের জন্য পুকুর খুব ভালো জায়গা।যেসব পুকুরে ৬ থেকে ৭ মাস ধরে পানি জমে থাকে সেখানে এই মাছ খুব সহজেই চাষ করা যায়।এমন পুকুর নির্বাচন করুন যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো পড়ে,প্রয়োজনমতো পানির ব্যবস্থা এবং মাছ ও খাদ্য সহজেই পুকুর পাড়ে পরিবহন করা যায়।
পুকুরঃপাঙ্গাস চাষের জন্য অবশ্যই কুকুরকে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।পুকুর শুকিয়ে গেলে প্রতি শতকে এক কেজি করে চুন দিতে হবে।পুকুরের মধ্যে কাদা থাকলে চুনকে অবশ্যই কাঁদার সঙ্গে ভালোভাবে মিক্স করে দিতে হবে এবং চুন দেওয়ার ৫ থেকে ৬ দিন পর পুকুরে পানি দিতে হবে।
পোনাঃপরিচিত মৎস্য খামার থেকে ভালো মানের পাঙ্গাস পোনাসংগ্রহ করে নিতে হবে। কেননা ভালো চাষের জন্য অনেকটাই নির্ভর করে উপযুক্ত পোনার উপর।একসঙ্গে ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার পাঙ্গাসের পোনা প্রতি একর পুকুরে চাষ করা যায়।
খাদ্যঃ প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার খেতে পারবে সেই পরিমাণ খাবার দিতে হবে।আমিষ জাতীয় খাবার ও পোল্ট্রি ফিডের খাবার দিতে হবে।নিয়মিত পানি পরিবর্তন করা হয় যে পুকুরে সে পুকুরের মাছ তুলনামূলক বেশি খাদ্য খায়।
শেষ কথাঃ
আজকের এই পোস্টে জানতে পেরেছেন তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন ও শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম সহ আরো বিভিন্ন তথ্য।আপনারা যারা অল্প খরচ করে মাছ চাষে করে লাভবান হতে চান।তাহলে অবশ্যই মাছ চাষের আগে মাছ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া।তেলাপিয়া মাছ চাষে কেমন লাভ বিষয়ক এ তথ্যগুলো জানার পরে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url