তুলসী পাতার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য - তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক আপনি কি কাশির সমস্যায় ভুগছেন? দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ সেবন করছেন কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। আপনার বাড়ির পাশ থেকে একটি গাছের পাতা নিয়মিত কয়দিন খেতে পারলেই চিরতরে মুক্তি পাবেন দীর্ঘমেয়াদি কাশি থেকে।আজকের এই পোস্টে আপনাদেরকে জানাবো তুলসী পাতার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য সহ আরো বিভিন্ন তথ্য।
আপনি যদি তুলসীপাতা সম্পর্কে না জানেন তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন তুলসী পাতার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য এবং তুলসী পাতা মুখে দিলে কি হয়।
ভূমিকাঃ
তুলসী পাতার গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না।বিশেষজ্ঞরা বলেছেন প্রতিদিন একটি করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে আজীবন সুস্থ থাকা যায়। শিশু থেকে শুরু করে যে কোন বয়সের ঠান্ডা সর্দি মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে তুলসী পাতা মহা ওষুধ।আপনার সর্দি কাশি থাকলে আধা চা চামচ মধুর সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে আপনার কাশি কমে যাবে।
তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তা আমরা প্রায় সবাই জানি।কিন্তু তুলসী পাতা খেলে কোন রোগ ভালো হয় এবং কি উপকার পাওয়া যায় তা আমরা অনেকেই জানিনা।তুলসী পাতা ওষুধ হিসেবে অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে।এই পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ইনফ্লেমেটরি থাকায় ডায়াবেটিস ক্যান্সার হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।তাই জেনে নিন তুলসী পাতার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে-
গলা ব্যথা দূর করেঃতুলসী পাতা গলা ব্যথার সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক উপকারী।গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট দূর করতে তুলসী পাতা অতুলনীয়।পানির সাথে কয়েকটি তুলসী পাতা ফুটিয়ে গড়গড়ে করলে দূরত্ব গলা ব্যথা সেরে যাবে।
সর্দি- কাশি কমাতেঃঠান্ডা সর্দি-কাশি হলেই ওষুধ হিসেবে তুলসি পাতা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। কেননা দূরত্ব সর্দি কাশে সারাতে ভালো কাজ করে।ঠান্ডা লেগে বুকে কফ জমে গেলে সকালবেলায় তুলসী পাতা আদা ও চা পাতা কে ভালো করে ফুটিয়ে সাথে মধু ও লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে দূরত্বই সমাধান পাবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃতুলসী পাতা রোগ প্রতিরোধধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অনেক উপকারী। খুব সহজেই এজমা,ফুসফুসের সমস্যায় মোকাবেলা করতে পারে এই পাতা।তুলসী পাতা এবং এলাচ পানিতে ফুটিয়ে খেতে পারলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।দ্রুত ক্ষতস্থান শুকানোর জন্য তুলসী পাতা বেটে লাগাতে পারেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃতুলসী পাতা ক্যান্সারের মতো মরণঘাতে রোগ কে দূর করতে সাহায্য করে।তুলসী পাতায় পাওয়া যায় রোসমারিনিক এসিড,লিউটিউলিন,মাইরেটিনাল,এপিজেনিন।এই উপাদানগুলি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুনঃপেয়ারা পাতা খেলে কি সুগার কমে?
ডায়াবেটিসস নিয়ন্ত্রণ রাখেঃইনসুলিনের কাজ করতে পারে তুলসী পাতা।রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে প্রতিদিন খাবারের আগে তুলসী পাতা খান।তুলসীতে রয়েছে স্যাপোনিন,ফ্ল্যাবন্যেড,ত্রিতারপিনিন এগুলো ডায়াবেটিসস ওষুধের কাজ করে।
ওজন কমায়ঃকোলেস্টরল এবং রক্তে সুগার মাত্রা রোধ করতে পারে তুলসী পাতা।এজন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ খুব সহজে রাখা যায়।
তুলসি পাতা মুখে দিলে কি হয়
তুলসী পাতায় অনেক ঔষধি গুনাগুন পাওয়া যায়। বিশেষ করে ঠান্ডা জ্বর এবং রূপচর্চায় তুলসী পাতার কোন তুলনা হয় না।ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং বয়সে ছাপ দূর করতে তুলসী পাতা ব্যবহার করুন। চলুন জেনে আসি তুলসী পাতা মুখে দিলে কি কি উপকার হয়-
- খুব বেশি ব্রণ হলে .৪থেকে ৫টি তুলসী পাতা ফুটন্ত পানিতে রেখে মুখের ওপর ভাব দিন। কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন,এতে করে ব্রণ থেকে মুক্তি পাবেন।
- ঝিঙের রসের সাথে তুলসী পাতার রস মিক্স করে কিছুক্ষণ মুখে লাগিয়ে রাখুন শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে।
- বেসন এবং তুলসী পাতা একসাথে পেস্ট আকারে মানিয়ে মুখের ওপর ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার ত্বকের কালো দাগ দূর হবে।
তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম
কাশির জন্য ওষুধের চেয়ে তুলসী পাতা ও মধু অনেক বেশি কার্যকারী। বিভিন্ন গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়।ফাঁপা কাশি ও শুকনো কাশের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তাই তুলসী পাতা সব ধরনের কাশের জন্য কাজ করে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম যাতে ঠিকভাবে কাজ করে-
আরো পড়ুনঃবরই পাতার রস খেলে কি হয়?
তুলসী পাতার রস যেভাবে খাবেন?
আধা চিমটি হলুদের গোড়া,এক চিমটি লং পেপার, ২ টেবিল চামচ পরিমাণ মধু,এক চিমটি গোলমরিচ ও ১ থেকে ৩ তুলসী পাতা নিয়ে সবগুলিকে একসাথে ব্লেন্ড করে নিবেন।এখান থেকে যে রস পাবেন দিনে দুই থেকে তিনবার পাঁচ মিলি করে খাবেন।যেহেতু প্রাকৃতিক এই উপাদানগুলি অনেক গরম, তাই দুই সপ্তাহ খাওয়ার পর বন্ধ করে দিবেন।
তুলসি পাতার অপকারিতা
তুলসী পাতা আমাদের জন্য উপকারী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটিকে না খাওয়াই ভালো। চলুন জেনে আসি তুলসী পাতার অপকারিতা-
- রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- নিম্ন রক্তচাপ।
- গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময় সমস্যা হতে পারে।
তুলসি চা এর উপকারিতা
দ্রুত ক্লান্ত ভাব কাটিয়ে চাঙ্গা হতে চায়ের কোন তুলনা হয় না।চা যে শুধুক্লান্তি ভাব দূর করে তা কিন্তু নয় এতে রয়েছে অনেক উপকারী গুণাগুণ। উপকারী গুণাগুণ পেতে তুলসী পাতা দিয়ে চা তৈরি করুন।
শীতকালে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে প্রতিদিন তুলসী পাতা দিয়ে চা খেতে পারেন।
- ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি কাশি জ্বর এর সমস্যায় অনেক উপকারী তুলসী পাতার চা। এছাড়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রেখে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- শ্বাসকষ্টের সমস্যা, দুশ্চিন্তা কমাতে এবং ত্বক ভালো রাখতে তুলসী পাতার চা অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক
তুলসী গাছের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুণ কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারি। এজন্য কোন কিছু ব্যবহারের আগে সঠিক নিয়ম জেনে ব্যবহার করা উচিত। চলুন জেনে নিন তুলসী পাতার ক্ষতি করে দিক সম্পর্কে-
- ডায়াবেটিস থাকলে তাদের গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লোইসেমিয়া হতে পারে।
- কাঁচা তুলসির পাতা খেলে দাঁতে দাগ পড়তে পারে।
- তুলসী পাতা বেশি পরিমাণ খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট এবং কাশির সাথে রক্ত বের হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার ফলে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।
- হার্টের ভালভের সমস্যায় যারা রক্তপাতলা করার ওষুধ সেবন করেন, তারা তুলসী পাতা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
তুলসী পাতার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য
তুলসী পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন একটি করে তুলসীপাতা খান। বারান্দায় কিংবা ছাদে যেখানে আলো বাতাস পাওয়া যায় সেখানে লাগিয়ে রাখতে পারেন মহা ওষুধি তুলসী গাছ। চলুন জেনে আসি তুলসী পাতা উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে-
- তুলসী পাতার রস মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী থাকার কারণে কোষের অবাঞ্ছিত বৃদ্ধি রোধ করে থাকে।
- তুলসী পাতার রস খেলে মন উৎফুল্ল এবং হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং জেগে থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যে কোষগুলো, সেগুলোর মৃত্যু রোধ করতে সাহায্য করে।
- লিভার কিডনির ত্বক ক্যান্সার রোদ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- চর্বি দহন ও শরীরে পরিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- বুক জ্বালাপোড়া রোদ করতে পারে।
- পেটের বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিয়ে হজমের জন্য সাহায্য করে।
- তুলসী পাতার সুগন্ধ মশা তাড়াতে সাহায্য করে।
- মুখের ব্রণ এবং কালো দাগ দূর করতে পারে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- চুল পড়া রোধ করতে পারে।
শেষ কথাঃ
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তুলসী পাতার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য এবং তুলসী পাতা মুখে দিলে কি হয় সহ আরো বিভিন্ন তথ্য। আপনার যদি ১২ মাসে ঠান্ডা সর্দি-কাশি গলা ব্যথা লেগে থাকে তাহলে তুলসী পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে নিয়মিত খেতে পারেন। তুলসী পাতার উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধু- বান্ধব ফ্যামিলি ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন। পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url