কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি - ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায়
প্রিয় পাঠক আপনার কি অল্পতেই শরীরে ক্লান্তি ভাব চলে আসে, অল্প হাঁটাহাঁটি করলেই হাঁটুর ব্যথা বাহুতে ব্যথা বেশি ব্যথা শুরু করে তাহলে জেনে নিন এইসব কিসের লক্ষণ।আজকের এই পোস্টে জানতে পারবেন ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি এবং ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায় গুলো কি কি।
আপনি যদি কোন খাবারে ক্যালসিয়াম বেশি পাওয়া যায় এ সম্পর্কে না জানেন তাহলে আজকের এই পোস্টটি পড়ুন এবং জেনে নিন কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি ও ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ
আমাদের মানব দেহে সব রকম ক্যালসিয়াম ও পুষ্টির প্রয়োজন।ভিটামিনের যেমন প্রয়োজন আছে ঠিক তেমনি আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনও রয়েছে।সঠিক মাত্রায় এইসব উপাদান গুলি আমাদের শরীরে থাকা প্রয়োজন।তাহলে দেখা দিতে পারে আমাদের শরীরে অনেক রকম সমস্যা।ক্যালসিয়াম আমাদের স্বাস্থ্যের দাঁত ও হাড়ের সাথে যুক্ত থাকে।
সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার
ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে দুধ। কিন্তু দেখা যায় দুধ অনেকেরই সহ্য হয় না।এইজন্য ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করার জন্য দুধ ছাড়াও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে যে খাবারগুলি,বয়স বাড়লে তো অবশ্যই কিন্তু দেখা যায় একটা বয়স পার হলেই মহিলাদের স্বাভাবিকভাবে ক্যালসিয়ামের ঘাট দিয়ে শুরু হতে লাগে।
চিকিৎসকরা বলেন অল্প বয়সে আর এর কথা চিন্তাভাবনা করলে বুড়ো বয়সে সমস্যাটা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে হাড়ের কাঠামো ও হাড় ভংগোর হয়ে যেতে পারে।পেশি সচল রাখার জন্য আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব অতুলনিয়।চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায় এবং সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গুলো কি কি-
দইঃযাদের বিভিন্ন সমস্যার কারণে দুধহজম করতে সমস্যা হয় তাদের জন্য বিকল্প পথ হচ্ছে দই।ফুল এক কাপ দই এর মধ্যে পাওয়া যায় ২৮০-২৯৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।টক দইয়ে থাকা ল্যাক্টোব্যাসিলাস খাবার হজম করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
চিয়া বীজঃহাড়ের স্বাস্থ্য মজবুত করতে ক্যালসিয়ামে ভরপুর অমেগা ৩ এ্যাসিড যুক্ত চিয়া খেতে পারেন। চিয়া বীজ নিয়মিত করে প্রতিদিন জলে ভিজিয়ে খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন তা যেন পরিমাণ মতো হয়।
আরো পড়ুনঃকাঠবাদামের ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা।
চিজঃচিজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ক্যালসিয়াম প্রোটিন। মিনারেল ফসফরাস এবং জিংক এর মত উপাদানও পাওয়া যায়।রাখতে পারেন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ছানা বা চিজ।যেহেতু চিজ ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে তাই পরিমাণ মতো খাবেন।
টোফুঃফ্যাটের মাত্রা টোফুতে খুব কম থাকে এবং প্রোটিনের মাত্রা বেশি পাওয়া যায়।দুধ খেতে সমস্যা হলে টোফু খেতে পারেন।অস্টিয়োপোরসিস এর সমস্যা দূর করতে টোফু অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডালঃবিভিন্ন রকমের ডাল যেমন ছোলা রাজমা সোয়াবিনের দানা ইত্যাদি এগুলোতে ক্যালসিয়ামের জন্য ভালো উৎস।রান্না করা এক কাপ ডাউন থেকে ২৭৫মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
ক্যালসিয়াম যুক্ত ফল
হাড় ঘন হওয়ার সবথেকে শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে 9 থেকে 18 বছর বয়স পর্যন্ত।ক্যালসিয়াম খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সময়।শরীরে শরিলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া যায়। যেমন চুলের রুক্ষতা ত্বকের শুষ্কতা মাংস পেশীর ব্যথা বিষণ্যতা ইত্যাদি।তাই ছোটবেলা থেকেই খাবারের মধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। চলুন জেনে আসি ক্যালসিয়ামযুক্ত ফলগুলোর সম্পর্কে-
ফলের মধ্যে রয়েছে নাশপতি,আঙ্গুর,পেঁপে্,কিউয়ি,শুকনা ডুমুর,মালবেরি,স্ট্রবেরি এবং কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট বেশি গ্রহণ করলে ডায়রিয়া পেট ফাঁপা হৃদরোগ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য ক্যালসিয়ামের বড়ি খেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করবেন।ক্যালসিয়াম গ্রহণ করার কারণে কিডনিতে পাথর হয় এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।
কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি
সুষম খাদ্য শক্তিশালী হাড়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম আপনার হারকে সুস্থ রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করে।সুস্থ হাড়ের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিগুণ সুষম খাদ্য থেকে পাওয়া যায়।হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম অতুলনীয় একটি ভিটামিন। প্রতিদি.৭৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রাপ্তবয়স্কদের প্রয়োজন হয়।
বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত সুষম খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমনঃবাঁধাকপি দুগ্ধজাত খাবার সবুজ শাকসবজি ওকরা মাছ সয়াবিন ইত্যাদি।চলুন জেনে আসি কোন মাঝে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়-
টিনজাত মাছঃপুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন টিনজাত মাছ,সার্ডিন এবং স্যামন খাওয়ার জন্য।ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে বেশি মাত্রা সার্ডিনে ৩৫০মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।এতে রয়েছে ফসফরাস যা হাড় পেশি ও দাত শক্ত করে এবং ভিটামিন ডি এর অনেক ভালো উৎস পাওয়া যায়।হৃদযন্ত্র ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এর মধ্যে থাকা ওমেগা থ্রী ফ্যাটি এসিড কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
কোন বাদামে ক্যালসিয়াম বেশি
বাদাম একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তা আমরা সবাই জানি।শরীরে খুব তাড়াতাড়ি শক্তি যোগায় এবং খোদা মেটাতে সাহায্য করে বাদাম।বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত করে বাদাম খাওয়ার কথা বলে থাকেন ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।সুস্থ থাকতে এবং ওজনকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রতিদিন আমাদের সবার বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন বাদামে ক্যালসিয়াম এবং কি কি গুন পাওয়া যায়-
আখরোটঃআখ্রোটের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি,ভিটামিন সি,ভিটামিন ই এছাড়াও পলিয়ানস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, আয়রন,ফসফরস্,ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।হজম শক্তি বাড়াতে,মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বাড়াতে,ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আখরোট।কবে শোকরা বলেছেন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে আখরোট।
কাজুবাদামঃপ্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট,ভিটামিন এ,প্রোটিন,জিংক,ক্যালসিয়াম,আয়রন,পটাশিয়াম পাওয়া যায় কাজুবাদামের মধ্যে।এক মুঠ কাজুবাদামে রয়েছে ১৬০ ক্যালোরি যা আমাদের দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ
সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের ডায়েটে যেমন প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট থাকা জরুরি, ঠিক পর্যাপ্ত মাত্রায় মিনারেল ও ভিটামিন থাকারও প্রয়োজন রয়েছে। মিনারেল এর মধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত এবং হাড়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে দেখা দিতে পারে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। চলুন জেনে নিন কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হচ্ছে-
- ক্যালসিয়ামের ঘাটতির সমস্যা হলে পেশি ব্যথা ক্রাম্প এবং খিচুনি অনুভব হবে।হাঁটাহাঁটি করার সময় বাহু হাত এবং পায়ে ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
- ক্যালসিয়ামের অভাবে অল্পতে ক্লান্তি ভাব চলে আসে এবং সর্বদা অলস বোধ করতে হয়।এর কারণে অনিদ্রার সমস্যা মাথা ঘুরা মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
- ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে চুল মোটা,শুষ্ক ত্বক,ত্বকের প্রদাহ,ত্বকের চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শরিলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শুষে নেই।যার কারণে শরীরে অস্টিয়োপোরেসিস রোগ হয়।
ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায়
ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন প্রত্যেক মানুষের শরীরে। হার ক্ষয়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে ক্যালসিয়ামের অভাবে। সবচেয়ে বেশি২০-৩০ বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের শরীরে হাড় তৈরি হয়।৪০পেরোলেই ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিতে থাকে আমাদের শরীরে।
এই সমস্যাটা নারীদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।তবে নিয়মিত কিছু খাবার খেলে হাড় ক্ষয় রোধ করা সম্ভব।চলুন জেনে আসি ক্যালসিয়ামের বৃদ্ধি উপায় সম্পর্কে-
পালং শাকঃসবুজ শাকসবজি ক্যালসিয়াম বৃদ্ধিসহ দাঁত এবং হাড় কে গঠন করতে সাহায্য করে।সিদ্ধ করা এক কাপ পালং শাকে শরীরে ক্যালসিয়ামের২৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে পারে।ফাইবার যুক্ত এ পাতায় পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন।যা আমাদের শরীরে হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে।
কমলার রসঃতাজা কমলার রস আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে থাকে। যার ফলে হারকে শক্তিশালী বানাতে সাহায্য করে।কমলার রস নিয়মিত খেলে অস্টিওপেরোসিসের কিছুটা ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ভিটামিন ডিঃসঠিক পরিমাণে খাদ্য থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া আমাদের জন্য অনেক কঠিন।হাড়কে মজবুত রাখতে ভিটামিন ডি সূর্যের আলো থেকে পেতে পারি।হালকা সূর্যের আলোতে ভোর বেলায় হাটাহাটি করা ভালো কেননা সূর্যের আলো থেকে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করা সম্ভব।
এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ডি যুক্ত ঔষধ পাওয়া যায়। সেগুলো খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
লেখকের শেষ কথাঃ
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি এবং ক্যালসিয়ামের বৃদ্ধির উপায় সহ আরও বিভিন্ন তথ্য।ক্যালসিয়াম বিষয়ক এ তথ্যগুলো জানার পর কোনভাবেই আপনার উচিত হবে না ক্যালসিয়াম ঘাটটির সমস্যাকে হালকা ভাবে নেওয়া।
কারণ এতে করে বৃদ্ধ বয়সে আমাদের জন্য নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।তাই কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি এবং ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায় গুলো আপনার বন্ধু-বান্ধব ফ্যামিলি মেম্বার এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url