জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়

প্রিয় পাঠক আপনি কি আপনার সন্তানের ওজন নিয়ে অনেক চিন্তিত?আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় এবং শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে কিছু তথ্য।
জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয়


আপনি যদি আপনার সন্তানের ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে করুন এবং জেনে নিন জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে কি করনীয় এবং শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে কিছু ঘরোয়া টিপস।

ভূমিকাঃ

প্রতিটি মা বাবা এবং পরিবারসহ অনেক চিন্তায় থাকে যে নবজাতক সুস্থ রয়েছে কিনা।কয়েকটি বিষয় খেয়াল করে দেখলে বুঝা সম্ভব নবজাতক সুস্থ রয়েছে কিনা।সুস্থ স্বাভাবিক নবজাতকের ওজন২.৫ থেকে২.৯ কেজি হওয়া উচিত।এর থেকে ওজন কম হলে শিশুকেনৌ ওজনের শিশু বলা হয়।

জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করনীয় 

সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সন্তানকে দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর দুধ পান করানো উচিত।সন্তানের জন্য মায়ের স্তনের দুধ অনেক ভালো।এতে করে সন্তানের পুষ্টির চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।একটি নবজাতক শিশুর কমপক্ষ.২.৫ কেজি থেকে৩.৫ কেজি ওজন হওয়া উচিত।

শিশুর ওজন যদ.২.৫ কেজের কম হয় তাহলে ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সাথে কিছু ঘরোয়া টিপস অনুসরণ করলে আপনার শিশু স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। চলুন জেনে আসে জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করণীয় কি?একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন আপনার সন্তান যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করে।

তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে জন্মগ্রহণ করা সন্তানের থেকে কিছুটা আলাদা হবে।জন্মগ্রহণ করার পর শিশুর ওজনের সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন বংশগতভাবে আবার কখনো গর্ভাবস্থায় মেডিকেল না আর করার কারণে হতে পারে।দেখে নেওয়া যাক আপনার শিশুকে ৬ মাস কি পরিচর্যা করলে সে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে।

দুধ পানঃসন্তানকে দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর মায়ের বুকের দুধ পান করানো উচিত। মায়ের বুকের দুধ প্রত্যেক সন্তানের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং অনেক ভালো। এতে করে সন্তানের পুষ্টির চাহিদা মেয়েটাই এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।


খাবার খাওয়াঃআপনার সন্তানের 6 মাস বয়স হলে সুস্থ চেহারার জন্য মাকে নিজের খাবারের দিকে নজর রাখতে হবে। এই সময় মায়ের ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে আইরন এবং প্রোটিন থাকা জরুরি। বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।

শিশুকে মালিশ করুনঃনিয়মিত রোদে রেখে আপনার শিশুকে ভালো করে তেল মালিশ করুন। কেননা সকালের হালকা রৌদ্রে শরীরে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এর ফলে আপনার শিশুর চেহারা বাড়বে ওজন বাড়বে এবং হা মজবুত করতে সাহায্য করবে।

বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত

আপনার শিশুর ওপর থেকে নজর এরাই না।আপনার শিশু রোগা না মোটা তা নিয়ে কি আপনি সব সময় চিন্তিত থাকেন।চিকিৎসকরা বলেন রোগা এবং মোটা দেখে বাচ্চা সুস্থ রয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা যায় না। কিন্তু আপনার শিশুর ওজন স্বাভাবিক আছে কিনা সেদিকে আপনার পড়ানোর রাখতে হবে।

আপনাদের সামনে একটি তালিকা প্রকাশ করা হলো এবং সেখান থেকে মিলিয়ে নিন বয়স অনুযায়ী আপনার বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত।
বয়স ছেলেদের মেয়েদের
৬ মাস ৭.৮ কেজি ৭.২ কেজি
১ বছর ১০.২ কেজি ৯.৫ কেজি
২ বছর ১২.৩ কেজি ১১.৮ কেজি
৩ বছর ১৪.৬ কেজি ১৪ কেজি
৪ বছর ১৬.৬ কেজি ১৬ কেজি
৫ বছর ১৮.৭ কেজি ১৭.৬ কেজি
৬ বছর ২০.৬৯ কেজি ১৯.৪ কেজি
৭ বছর ২২.১ কেজি ২১.৮ কেজি
৮ বছর ২৫.৩ কেজি ২৪.৭ কেজি
৯ বছর ২৮ কেজি ২৬ কেজি
১০ বছর ৩২ কেজি ৩০ কেজি
১১ বছর ৩৬ কেজি ৩৩ কেজি
১২ বছর ৪৫ কেজি ৪২ কেজি

শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির উপায়

প্রতিটি বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা শারীরিক ও মানসিক উন্নতির ওপর নির্ভর করে তার বংশ। তাছাড়া বাচ্চাদের বিকাশের জন্য জিনো দায়ী হয়ে থাকে।বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য অনেক বিষয়ে উপর নির্ভর করে।বাচ্চার খাদ্য ভাসে বিশেষ করে প্রোটিন ক্যালসিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।চলুন জেনে নেওয়া যাক শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে-

কার্বোহাইড্রেট খাদ্যঃকাজ করার বা শরীরে শক্তি ও এনার্জি পেতে পারি শর্করা এবং শস্যজাতীয় খাদ্য থেকে।ফাইবার আইরন ম্যাগনেসিয়াম ভিটামিন বি ও সেলেনিয়াম এর মত খনিজ সব উপাদান গুলো এ ধরনের খাদ্য থেকে পাওয়া সম্ভব। এই ধরনের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি পাওয়া যায়। বয়সন্ধির সময় বাচ্চাদেরকে এই ধরনের খাদ্য গ্রহণের মাত্রা অনেকটাই বাড়াতে হবে।
শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির উপায়

ডিমঃডিমের সাদা অংশে প্রোটিন এবং কুসুমে পাওয়া যায়, কোলেস্টেরল। প্রোটিনের জন্য ভালো উৎস ডিম।বাচ্চাদের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য ডিমে থাকা ভিটামি্ন বি ১২ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।প্রতিদিন বাচ্চাকে এক থেকে দুইটি করে ডিম খাওয়ানো যেতে পারে।

কলাঃডিমের মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,ফাইবার,ভিটামিন বি,ভিটামিন বি৬ উপকারী সকল প্রবায়োটিক।যা বাচ্চার উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য দুর্দান্ত কাজ করে এর সকল উপাদানগুলি।অবশ্যই বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্য হিসেবে কলা যোগ করতে পারেন।


সবুজ শাকসবজিঃবাচ্চাদের জন্য যেকোনো প্রকারের সবুজ শাকসবজি খাওয়া ভালো।ভিটামিন এ,ভিটামিন সি,ভিটামিন কে,ফোলেট,ফাইবার,আইরন,পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মতো উপাদান রয়েছে পালং শাকে।এজন্য অবশ্যই সবুজ শাকশব্জির সাথে পালং শাক রাখবেন।এই উপাদান গুলি সন্তানের বিকাশ ও সার্বিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি।

নবজাতকের ওজন বৃদ্ধির চার্ট

নবজাতকের আদর্শ ওজন সম্পর্কে প্রতিটি মা বাবা অনেক চিন্তিত থাকেন।মায়েরা প্রথম সন্তান জন্মের পর শিশুর ওজন স্বাভাবিক রয়েছে কিনা তা নিয়ে খুব ভাবনা চিন্তায় থাকেন।নিচে নবজাতকের ওজনের একটি চাট দেওয়া হল।এই চার্টের সাথে পরিমাপ করে নির্ধারিত করতে পারবেন আপনার শিশুর বয়স স্বাভাবিক রয়েছে কিনা।
বয়স ছেলে মেয়ে
জন্ম ৩.৫ কেজি ৩.৪ কেজি
১ মাস ৪.৫ কেজি ৪.২ কেজি
২ মাস ৫.৬ কেজি ৫.১ কেজি
৩ মাস ৬.৪ কেজি ৫.৮ কেজি
৪ মাস ৭ কেজি ৬.৪ কেজি
৫ মাস ৭.৫ কেজি ৬.৮ কেজি
৬ মাস ৭.৮ কেজি ৭.২ কেজি
৭ মাস ৮.২ কেজি ৭.৫ কেজি
৮ মাস ৮.৫ কেজি ৭.৮ কেজি
৯ মাস ৮.৮ কেজি ৮.১ কেজি
১০ মাস ৯.১ কেজি ৮.৪ কেজি
১১ মাস ৯.৩ কেজি ৮.৬ কেজি
১ বছর ৯.৫ কেজি ৮.৮ কেজি

বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির ঔষধ

শিশুরা বায়না করে খাবার নিয়ে তারা সব সময় মুখরচুক খাবার খেতে চাই।শিশুদের উচ্চতা এবং বয়সের সাথে মিল রেখে সঠিক ওজন থাকা জরুরি।শিশুদের ওজন কম থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়, যার জন্য খুব সহজেই বাসা বাঁধতে পারে নানান রোগ।চকলেট ভাজাপোড়া জাঙ্ক ফুড এইসবের দিকে শিশুদের নজর বেশি থাকে।

প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকলেও এসব খাবারের কোনরকম পুষ্টিগুণ থাকে না।তাই যে খাবার খেলে ক্যালরি এবং পুষ্টিগুণ দুটাই পাওয়া যায় সেই খাবার আমাদের শিশুকে খাওয়ানো উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে-

দুধঃদুধের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন এর উৎস। নিয়মিত প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ আপনার শিশুকে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।শিশুদের ওজন বৃদ্ধির জন্য মাখন,অথবা অল্প চিনি দিয়ে পুডিং বানিয়ে খাওয়াতে পারেন।


আলুঃআলুর মধ্যে পাওয়া যায় কার্বোহাইড্রেটের সবচেয়ে ভালো উৎস।শিশুর ওজন বাড়ানোর জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায.৩৫%কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার রাখতে হবে।শিশুর ওজন বাড়াতে আলোতে থাকা ইয়ে অ্যামাইনো এসিড অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

মুরগির মাংসঃমুরগির মাংস হচ্ছে প্রোটিনের অন্যতম উৎস। মুরগির মাংস শিশুর ওজন বৃদ্ধি এবং পেশি মজবুত করতে সাহায্য করে।আপনার শিশুর খাদ্য তালিকায় সপ্তাহে দুই থেকে চার দিন মুরগির মাংস রাখতে পারেন।

শেষ কথাঃ

আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে কি করনীয় এবং শিশুর ওজন ও উচ্চতা বাড়ানোর উপায় সহ আরো বিভিন্ন তথ্য।শিশু সংক্রান্ত এ বিষয়গুলি জানার পর আপনার কোনোভাবেই উচিত হবে না আপনার শিশুর ওজন কম থাকলে হালকা ভাবে নেওয়া।

কারণ এখান থেকে তৈরি হতে পারে আপনার শিশুর অনেক রকম সমস্যা।জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে কি করনীয় এ সম্পর্কে জেনে উপকৃত হয়ে থাকলে পোস্টটি অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব ফ্যামিলি মেম্বার ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url