নিম পাতার রস খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা জানুন

নিম গাছ আমাদের মাঝে পরিচিত একটি বৃক্ষ। কিন্তু আপনি জানেন কি? নিম গাছের মধ্যে রয়েছে নানান ঔষধে গুনাগুন। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা এবং চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার।
নিম পাতার রস খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা জানুন

আপনি যদি নিম গাছ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা এবং চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে।

ভূমিকাঃ

ভারতের আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলেন শতভাগ উপকারিতা পাওয়ার জন্য নিম পাতা কে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন রূপচর্চায়, মাথার খুশকির জন্য,ত্বকের ব্রণ কমাতে, পেটের নানান সমস্যা সমাধানে,হজম শক্তি বৃদ্ধি,ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি ভালো করতে,কাশি কমাতে,শরীরের ক্লান্তি দূর করতে ইত্যাদি কাজে নিম পাতা ব্যবহার করা যায়।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম গাছ একটি চিরমহৎ আজাডির‍্যাকটা ইন্ডিকা বলা হয়।এই গাছের প্রতিটি অংশকে অনেক দেশে বিভিন্ন ওষুধে ব্যবহার করা হয়।শরীরের বিভিন্ন জীবাণু ধ্বংস করার জন্য এ গাছের ডাল,শিকড়,ছাল এবং ফলকে টনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসার জন্য এই গাছের ছালকে ব্যবহার করা হয়।

এটি প্রচুর পরিমাণে চর্ম রোগের জন্য ব্যবহার হয়।এছাড়াও ত্বকের আলসা,পেট ব্যথা,ডায়াবেটিস,কুষ্ঠকাঠিন্য,চোখের নানা ব্যাধি,মাড়ি ফুলে যাওয়া,জ্বর এবং হৃদপিণ্ডের নানান রোগের জন্য এই গাছের পাতা ব্যবহার হয়।চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-

ভাইরাস প্রতিরোধ করেঃভারতীয় উপমহাদেশে ভাইরাস রোগ প্রতিরোধ করর জন্য নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে।আধুনিক চিকিৎসার আগে হাম, চিকেন পক্স এবং চর্মরোগ হলে নিমপাতা বেটে লাগানো হতো। তাছাড়া চুলকানি এবং ত্বকের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে নিমপাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিম পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন কয়েকটি নিমপাতা কে গুড়ো করে এক গ্লাস পানির সাথে মিস করে খেতে হবে।


এলার্জি দূর করেঃপ্রতিদিন নিম পাতা ফুটিয়ে ওই পানি দিয়ে গোসল করলে এরা যে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।তাছাড়া কাঁচা হলুদের সাথে নিম পাতা বেটে শরিলে লাগাতে পারেন।

ওজন কমায়ঃওজন কমানোর জন্য নিমের ফুলে রয়েছে অসাধারণ ক্ষমতা।শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং তলপেটের চর্বি ও অতিরিক্ত চর্বি কমাতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।ওজন কমানোর জন্য এক চা চামচ মধু, একমুঠো নিম ফুল এবং এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতেঃনিম পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুন কাজ করে। রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে নিমপাতা সাহায্য করে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত পাঁচটি গোলমরিচ এবং দশটি নিমপাতা বেটে সকালে খেতে হবে

চোখের চুলকানি দূর করতেঃচোখ চুলকালে ১০ মিনিট নিম পাতা সিদ্ধ করে ওই পানি ঠান্ডা হলে চোখে ঝাপটা দিন। এতে করে খুব দ্রুত আরাম পাবেন।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে নিমপাতা কে জাদুকারি পাতা বলা হয়।চিকিৎসকরা বলেন নিম পাতায় প্রাকৃতিক সব আশ্চর্য উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু অনেক গুনাগুন থাকলেও কারো কারো ক্ষেত্রে এ পাতাটি ক্ষতিকর হতে পারে। প্রিয় বন্ধুরা নিম পাতা কাদের জন্য ক্ষতিকর তা নিচে তুলে ধরা হলো।

  • খালি পেটে বেশি দিন নিমপাতা খেলে উপকারের বিপরীত হতে পারে, এজন্য দীর্ঘদিন নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • মাঝেমধ্যে বন্ধ্যাত্বর কারণ হয়ে উঠতে পারে নিম পাতা, এজন্য যারা সন্তান নিতে চাচ্ছেন তাদের নিমপাতা না খাওয়াই ভালো।
  • এটি খাওয়ার পর কারো যদি ডায়রিয়া,মাথাব্যথা,বমি ভাব,এগুলো সমস্যা দেখা দেয়,তাহলে সাথে সাথে এটি খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
  • গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিমপাতা উপকারী নাও হতে পারে।এটি গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
  • যেকোনো অপারেশনের দুই সপ্তাহ আগে থেকে নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
  • যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে, তারা নিমপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • দিনে সর্বোচ্চ ২ টা নিম পাতা খাওয়া যায়, এর অতিরিক্ত ব্যবহারে উপকারের চেয়ে উপকার বেশি করতে পারে।

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

চর্ম রোগের চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ ওষুধ হিসেবে নিম পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। এমনকি চিকেন পক্স আলসার চিকিৎসায় নিমপাতা ব্যবহৃত হয়।চর্মরোগ থেকে দূরে থাকতে হলে প্রতিদিন একমুঠো নিমপাতা দিয়ে গোসল করুন এতে শরীরও ঠান্ডা হবে।তাছাড়া গবেষকরা বলেছেন চুল এবং ত্বকের যত্নে নিম পাতা অনেক উপকারী। প্রিয় পাঠক চলুন জেনে নেওয়া যাক চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে-
নিম পাতার রস খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা জানুন


স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্যঃ১৫ থেকে ২০টা নিমপাতা গোসলের পানিতে ছেড়ে দিয়ে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন।এবার সেই পানি দিয়ে গোসল করুন। গ্রীসের গরমে ত্বকের নানান সংক্রমণ থেকে এই পানি আপনাকে দূরে রাখবে।

ত্বকের জন্য ফেসপ্যাকঃএক চা চামচ তুলছি পাতার পাউডার,এক চা চামচ নিমপাতার পাউডার এবং সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট আকারে তৈরি করুন।সেটি ত্বকের উপর লাগিয়ে দশ মিনিট পর ধুয়ে নিন।এতে করে খুব সহজেই ত্বকের কালো দাগ দূর করবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।

ব্রণের জন্য ফেসপ্যাকঃকয়েকটি নিমপাতা পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।সেই নিম পাতা বিলিন্ডার করে পেস্ট তৈরি করুন,ব্রণের ওপর লাগিয়ে আধাঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন, এতে করে ব্রণ ভালো হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

ক্ষত সারানোর জন্যঃকয়েকটি নিম পাতা বেটে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে নিন। এতে করে খুব দূরত্ব ক্ষতস্থান ভালো হবে।

ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার

ব্রণ এমন একটি নাছোড়বান্দা সমস্যা যেটি দেখা দিলে সহজেই যেতে চাই না। ব্রণ নিয়ে যদি আপনি সমস্যায় থাকেন এবং কোন কিছু ব্যবহার করেও এর থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না? তাহলে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। নিমপাতা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে অনেক সাহায্য করে।চুলকানি ব্রণের দাগ এবং ত্বকের নানান সমস্যার সমাধানে নিমপাতা অনেক কার্যকরী। চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্রণের জন্য নিমপাতার ব্যবহার-

নিম পাতার প্যাকঃএকমুঠো নিমপাতা ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর ভালো করে বিলিন্ডার অথবা পাটায় বেটে পেস্ট আকারে তৈরি করুন।পেস্টের সঙ্গে অল্প গোলাপ জল এবং আধা চামচ লেবুর রসকে একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।ভালো করে সেই মিশ্রণটি ত্বকের ওপর লাগিয়ে নিন।

চাইলে পাশাপাশি বগলে,ঘাড়ে,হাতের কনুইতে লাগাতে পারেন।কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখার পর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করতে পারলে ব্রণের সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন।


নিম পাতা এবং এলোভেরাঃএলোভেরা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান।অ্যালোভেরার সাথে নিমপাতা মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরো বেশি উপকার পাবেন।অল্প নিম পাতা শুকিয়ে গুড়া করে নিন, সেই গুড়া এলোভেরা জেলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।

সেই মিশ্রণটি ত্বকের ওপর ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।এরপর মধুর সাথে সামান্য লেবুর রস তোকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে নিন। এটি করতে পারলে ব্রণ এবং দাগ ছোপ সহজেই দূর হবে।

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

নেম এ মনে একটি পার্টিতে গাছ যার ডাল,পাতা,ফুল,ফল,বিজ সবকিছুর উপকারিতা রয়েছে।এক কথায় বলা যায় নিম গাছের খাওয়াও শরীরের জন্য অনেক উপকারী।এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য উপাদান রয়েছে নিম পাতায়। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং এটি নানান রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে।প্রিয় পাঠক জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেঃগবেষকরা বলেন এস মিটানস ই ফ্যাকালিস এবং এস আরিয়াসের মত অনেক উপাদান রয়েছে নিম পাতায়। যেগুলি শরীরের যেকোনো ব্যাকটেরিয়াকে খুব সহজেই ধ্বংস করতে পারে। এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেঃঅনেকেই রয়েছেন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য নিম পাতা অনেক প্রয়োজনীয়।নিয়মিত নিম পাতা খেতে পারলে রক্ত চলাচল হয় এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে।

দাঁতের রোগ ভালো করতেঃপ্রাচীনকাল থেকেই দাঁতের সুস্থতার জন্য নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করার প্রচলন আছে।দন্তরোধ থেকে রক্ষা পেতে এবং দাঁত মজবুত করতে প্রতিদিন নিমের ডাল অথবা নিমপাতার গুঁড়া দিয়ে দাঁত মাজতে হবে।


ঠান্ডা জনিত বুকের ব্যথায়ঃবুকের কফ জমে গিয়ে অনেক সময় বুক ব্যথা করে। এর জন্য ২৫ ফোটা নিম পাতার রস হালকা কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যে বুকের ব্যথা কমে যাবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন এই ওষুধটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য না।

জন্ডিস ভালো করতেঃজন্ডিস ভালো করার জন্য সকালে একটু মধুর সাথে নিম পাতার রস খালি পেটে খেতে হবে।২০ থেকে ২৫ ফোটা নিম পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে এক সপ্তাহ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারলে জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

অজীর্ণঃযাদের অনেকদিন ধরে পেটের অসুখ,পাতলা পায়খানার সমস্যা হলে ২৫ ফোটা নিম পাতার রস অল্প একটু পানির সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল খেতে পারলে পাতলা পায়খানা ভালো হবে।

লেখক এর শেষ কথাঃ

আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা এবং চর্ম রোগে নিম পাতার ব্যবহার সহ আরো বিভিন্ন তথ্য।যাদের অ্যালার্জি, বাত ব্যথা, চোখ চুলকায় ত্বকে অনেক ব্রণ জন্ডিসের সমস্যা এবং ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত নিম পাতার রস খেতে পারেন।গ্রামে এই গাছটি অনেক জায়গায় লাগানো থাকে কিন্তু এর উপকারিতা না জানার কারণে আমরা ব্যবহার করি না।

তাই আজকের নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধব ফ্যামিলি মেম্বার এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা গুলো জানার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url