শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ যেটি এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে অন্য মানুষের শরীরে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে।আজকের এই পোস্টে আপনাদেরকে জানাবো শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ এবং শিশুর ডেঙ্গু রোগের খাবার সমূহ।
শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ

আপনি যদি ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে না জানে তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ ও শিশুর ডেঙ্গু রোগের খাবার সম্পর্কে।

ভূমিকাঃ

সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ উপসর্গগুলো দেখা দেয়।শিশু অস্বাভাবিক ভাবে ছটফট করে এবং নেতিয়ে পড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে। হঠাৎ করেই ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর আসতে পারে এবং তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয়ে যেতে পারে।

শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার 

১৫ বছর বয়সে বেশিরভাগ ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। শহরে এবং বস্তি এলাকায় বর্ষার মৌসুমে ডেঙ্গু দেখা যায়।ফলে এই সময় শিশুদের আক্রান্তর হার অনেক বেশি।চলুন জেনে আসি শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের কয়েকটি সতর্ককরণ লক্ষণ সম্পর্কে-
  • শরীরে পানি জমা।
  • পেটের ব্যথা।
  • বেশি বেশি বমি হওয়া।
  • অতিরিক্ত দুর্বলতা।
  • নাক ও মাড়ি থেকে রক্তপাত।
  • অস্থিরতা বেশি হওয়া।
প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ
শিশুর শরীরে জ্বর আসলে সাধারণ জ্বর মনে না করে প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।মিশর শরিলে বিপদজনক চিহ্ন থাকলে ডেঙ্গু হতে পারে।শরীর থেকে জ্বর চলে যাওয়ার ২৪ ঘন্টা পর অসুস্থ অনুভব করলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। এবং প্রয়োজনে ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে।

শিশুর ডেঙ্গু রোগের খাবার

বর্তমানে ডেঙ্গু সারাদেশে মারাত্মকভাবে ছড়াচ্ছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাও যাচ্ছে।তাই আমাদেরকে ডেঙ্গু থেকে কিভাবে বাঁচা যায় এবং ডেঙ্গু হলে দূরত্ব সেরে ওঠার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করার জন্য খনিজ এবং ভিটামিন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত। চলুন জেনে আসি শিশুর ডেঙ্গু রোগের খাবার সম্পর্কে-
শিশুর ডেঙ্গু রোগের খাবার

পাতাযুক্ত শাকঃপ্রচুর পরিমাণে আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় এমন পাতাযুক্ত শাক গ্রহণ করতে হবে। যেমন লাল শাক,পালং শাক এবং অন্যান্য শাকসবজি,যা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য শরীরে প্লাটিলেট বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

ডাবের পানিঃডেঙ্গু জ্বর হলে শরিলে পানির শূন্যতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে ইলেকট্রোলাইটসে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়ে শরীরকে ডিহাইড্রেট করে তুলে।এ সময় শরীলকে হাইড্রেট রেখে ইলেক্ট্রোলাইটগুলো পূরণ করার জন্য বেশি বেশি করে ডাবের পানি পান করতে হবে।


ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু কমলা লেবু জাম্বুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের বেশি করে খাওয়ানো উচিত।ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে 

সারাদেশে মশার উৎপাতে ডেঙ্গু,ম্যালেরিয়া,রোগের প্রভাব বেড়েই চলেছে।যার ফলে শিশু থেকে বয়স্ক সবাই জ্বরে ভুগছেন। আমাদের মনে সব সময় একটি প্রশ্ন থাকে তা হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে?শরিলে জ্বর এলে শরীর দুর্বলতা,শরীরের যন্ত্রণা এবং দেহের তাপমাত্রা অনেকটা বাড়ে।

এই সময় হালকা কুসুম গরম পানি করে গোসল করা যায়।হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারলে শরীরের ব্যথা, বেশি ব্যথা এবং অনেকটাই জ্বর কমে যাবে।এইজন্য শরীরের জ্বর থাকলে ঠান্ডা পানি বাদ দিয়ে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করা যায়।

ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না 

ডেঙ্গু হলে তীব্র জ্বর শরীলে দেখা যায়। যার কারণে রোগীর বমি বমি ভাব এবং ক্ষুধা মান্দা হওয়ার ফলে অনেক কষ্টকর হয় খাবার খাওয়া।প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীকে তরল খাবার গ্রহণ করাটা ভালো।তরল খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে পানির শূন্যতা পূরণ হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে।

রোগীর অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে তরল খাবারের সাথে কলা,গরম ভাত,দই,চিড়া,সেদ্ধ আলু,লাউ,চাল কুমড়া,শাকসবজি,ঝিঙ্গা এইসব খাওয়া যেতে পারে।হালকা তেল এবং অল্প মসলা যুক্ত করে পানি জাতীয় সবজির সাথে শিং মাছ মাগুর দেশি মুরগি শোল মাছ পাতলা ঝোল করে রোগীকে খাওয়া যেতে পারে।


এই সময় শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য ডাবের পানি ফলের রস প্রচুর পরিমাণে পান করাতে হবে।চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না।

  • প্রক্রিয়া জাতীয় খাবার কোটা জাতীয় খাবার এবং কেন এড়িয়ে চলতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে তেল মসলা লবণ এবং চিনিযুক্ত খাবার কোনভাবেই খাওয়া যাবে না।
  • বাজারে পাওয়া যায় কমল পানীয় যেমন প্যাকেজ জোশ এইসব বাদ দিতে হবে।
  • তেল মসলাযুক্ত গুরুপাক খাবার খাওয়া যাবেনা এর ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
  • বিশেষ করে দুধ কফি দুধ চা এবং ক্যাফিন জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ

সাধারণত ৫ থেকে ১৪ দিন পরে শুরু হয় ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো।যেমন নাগ বা মাড়ি থেকে রক্তপাত,খিচুনি,জ্বর,বমি বমি ভাব,ত্বকে হালকা ক্ষতভাবে,জ্বর হওয়া ইত্যাদি ডেঙ্গুর লক্ষণ।২থেকে৬ দিন ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো স্থায়ী হয়ে থাকে।মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো গুরুতর হলে।

মারাত্মক রক্তপাত,প্লাজমালিক,শ্বাসকষ্ট,তরল জমা,এবং অঙ্গ দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ নেমে যেতে পারে।এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখলে আমাদেরকে শতর্ক হতে হবে।চলুন জেনে নেওয়া যাক শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ সম্পর্কে।
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া।
  • খিচুনি,অস্বাভাবিক কথাবার্তা,ঝিমুনি ভাব।
  • বসে এবং শোয়া থেকে উঠার সময় ঝিমঝিম ভাব অথবা মাথা ঘুরানো।
  • শরীর স্যাসসেটে কিংবা ফ্যাকাস হয়ে যাওয়া এবং হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
  • আধা ঘন্টায় দুইবারের বেশি বমি হওয়া অর্থাৎ একটানা বমি হওয়া।
  • পেট কিংবা পায়ে পানি এলে অভিভাবকের লক্ষ্য করা।
  • পেটের মধ্যে ব্যথা শুরু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
  • ৪থেকে৬ ঘন্টার মধ্যে শিশু প্রসব না করলে সতর্ক হওয়া।
  • নাক বা দাঁতের মাড়ি এবং বমি কিংবা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে 

পুরো দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই চলুন ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জরুরি কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-

সাধারণত৪ থেকে৬ দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর থাকতে পারে।৪৮ থেকে৭২ ঘন্টার মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে গেলে সাধারন সময় বলা হয়।ডেঙ্গুর কারণে এ সময় শরীরে বিভিন্ন রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য জ্বর ছেড়ে গেলেও ভালোভাবে নিশ্চিত হতে হবে।


জ্বর আসার প্রথম দিন ডেঙ্গুর পরীক্ষা করা সম্ভব।অনেকেই মনে করে জ্বরের বয়স তিন দিন পার না হলে ডেঙ্গু শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এটা একেবারেই ভুল ধারণা ডেঙ্গু হয়েছে কিনা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম দিন শনাক্ত করা সম্ভব।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে 

চিকিৎসকরা বলেন জ্বর হলে প্রথম ৭২ ঘন্টা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট.৬ ঘন্টা পরপর খেতে হবে।৭২ ঘন্টার মধ্যে জ্বর না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।যেহেতু ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু বর্ষার মৌসুমে বেশি হয় তাই এ সময় কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।অবহেলা করার কারণে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে।

লেখকের শেষ কথাঃ

আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ এবং শিশুর ডেঙ্গু রোগের খাবার সহ আরো বিভিন্ন তথ্য। ডেঙ্গু বিষয়ক তথ্যগুলো জানার পর কোন ভাবেই আপনার উচিত হবে না ডেঙ্গুকে সাধারণভাবে নেওয়া। কারণ এখান থেকে আমাদের শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো জেনে আপনি উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন ও ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url