বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা - বিড়াল পালনের নিয়ম
গৃহপালিত প্রাণী হচ্ছে বিড়াল।পরিষ্কার-পরিছন্নতা এই বিড়ালকে লালন পালন করা ইসলামে জায়েজ।আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বিড়াল পালনের নিয়ম সম্পর্কে।
আপনি যদি বিড়াল সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বিড়াল পালনের নিয়ম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।
ভূমিকাঃ
গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে শান্তশিষ্ট প্রাণী হচ্ছে বিড়াল।বিড়ালের জন্য ভালোবাসা রেখে প্রতিবছর ৮ ই আগস্ট আন্তর্জাতিক বিড়াল দিবস পালন করা হয়ে থাকে।বিড়ালের জন্য ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবায়ে-কেরামরা।তাই আমরা আজকে জানব বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।
বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা
গৃহপালিত এই প্রাণী খুব সহজেই মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে ভালোবাসে।আপনি যদি বিড়ালকে সামান্য খাবার এবং আদর যত্ন করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই আপনার পোষ মানবে।অনেকে আছেন শখের কারণে বিড়াল পুষে থাকেন, আবার অনেকেই আছে বিড়ালকে একদম পছন্দ করেন না।
কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে যারা বেড়াল পুসে তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন।এমনকি শিশুর জন্য বিড়াল খুব ভালো একটি প্রাণী। চলুন জেনে আসি বাড়িতে বিড়াল থাকলে তার উপকারিতা ও অপকারিতা কি পেতে পারি।
- অনেক গবেষণায় দেখা গেছে বিড়াল পোষলে অন্যদের থেকে ৩৫ শতাংশ মানসিক চাপ এবং হৃদরোগের ছবি কমে যায়।
- গবেষকরা বলছেন,মায়ো ক্লিনিক মেডিসিনের পরামর্শ অনুযায়ী ভালো ঘুমের জন্য বিড়ালকে সঙ্গী হিসেবে রাখতে পারেন।
- বিশ্বের সবচেয়ে বিড়ালের মিউ মিউ ডাক সুন্দর।এক গবেষণায় দেখা যায় বিড়ালের মিউ মিউ ডাক অস্থির প্রদাহ নিরাময় এবং শরীরের পেশিকে থেরাপির মতো কাজ করতে সাহায্য করে।
- গবেষণায় দেখা গেছে বিড়ালের সাথে সময় কাটালে আরামদায়ক রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ এবং দেহের প্রশান্তি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
- বিড়াল ঘরের ইঁদুর মারতে খুব পারদর্শী। তাছাড়া কুকুরের চেয়ে অনেক খাবার কম খাই বিড়াল।
- যে সকল ছেলেরা বেড়াল পুষে তারা অনেক স্মার্ট হয়। ফলে মেয়েরা তাদেরকে বেশি পছন্দ করেন।
- অবসর সময়ে একজন ভালো বন্ধু হিসেবে বিড়ালকে সঙ্গী করতে পারেন। সে আপনাকে সর্বদাই প্রশান্তি এবং আনন্দ এনে দিবে।
কুকুর বিড়াল পোষা কি জায়েজ
আমরা যেমন আল্লাহ তাআলার মাখলুক ঠিক তেমনি কুকুর বিড়াল মহান আল্লাহর মাখলুক।তাদেরও কিছু অধিকার আছে মহান আল্লাহর মাখলুক হওয়ার জন্য। এজন্য কুকুরকে বিনা কারণে কষ্ট দেওয়া আমাদের কোন অধিকার নেই।মানুষের কাছাকাছি যেহেতু তারা বসবাস করে,তাই ইসলামে তাদের জন্য কিছু নির্দেশনা রয়েছে যেগুলো মুসলমান হিসেবে আমাদের জানা কর্তব্য।নিচে সে সম্পর্কে তুলে ধরা হলোঃ
অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী কুকুর। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে গরু-ছাগল ঘরবাড়ি ইত্যাদি পাহারা দিতে দেখা যায়। এমনকি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ব্যবহার করে অবৈধ অস্ত্র ও আসামি খোঁজ করেন আইন রক্ষা বাহিনীরা। তাই কুকুর পালনের সুযোগ রয়েছে শুধুমাত্র নিরাপত্তা এবংপাহারা দেওয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু অবশ্যই কুকুরকে ঘরের বাইরে রাখতে হবে।
আরো পড়ুনঃআমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি পশু রক্ষাকারী অথবা শিকারী কুকুর ছাড়া অন্য কুকুর পালন করে। প্রতিদিন তার আমল থেকে দুই কেরাব পরিমাণ সওয়াব ব কমে যাবে। (বুখারীঃ৫৪৮২)
ঘরে বিড়াল থাকলে কি নামাজ হবে
হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবায়ে কেরামদের থেকে যতটুকু জানা যায় তাতে বিড়াল পবিত্র প্রাণী।এজন্য বিড়াল ঘরে থাকলে নামাজের কোন রকমের ক্ষতি হবে না। তবে কিছু সতর্ক থাকতে হবে বিড়ালঅনেক সময় বাইরে অনেক নাপাক কিছুর উপর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করার কারণে পায়ে নাপাকি লেগে থাকতে পারে।এজন্য বিড়ালকে ঘরের মধ্যে রেখে নামাজ পড়াটাই উত্তম যাতে জায়নাবাজের সামনে ঘোরাঘুরি করলেও নামাজে মনোযোগ নষ্ট না হয়।
বিড়াল নিয়ে ইসলামিক ক্যাপশন
স্বাধীন প্রাণী হিসাবে বিড়াল পরিচিত। তারা নিজস্ব সময় কাটাতে খুব পছন্দ করে।পৃথিবীতে পোষা প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাণী বিড়ল।চলুন বিড়াল নিয়ে কিছু মজার ইসলামিক ক্যাপশন জেনে আসি।
বিড়াল নিয়ে ক্যাপশনঃ
- বিড়ালের ২৩০টির বেশি হার রয়েছে,যা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।
- বিড়ালের ঘুম ১৫ ঘন্টা মত।
- বিড়ালের চোখে ছয়টি পেশী রয়েছে, যা মানুষের চোখের চেয়ে দুইগুন।
- বিড়ালের গোফ তাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- বিড়ালের গড় আয়ু 15 বছর।
- বিড়ালের ৩২টি দাঁত রয়েছে।
- বিড়ালের বিভিন্ন রং হয়।
- অন্ধকারে বিড়াল খুব ভালো দেখতে পাই।
- বিড়াল তাদের জিভ দিয়ে পরিষ্কার করে।
বিড়াল নিয়ে ইসলামিক ক্যাপশনঃ
- ভালোবেসে বিড়াল পুসি নবীর সুন্নত পালন করি।
- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং নিরহ প্রাণী বিড়াল।
- মসজিদে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে বিড়ালের।
- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়ালকে অনেক বেশি ভালবাসতেন।
- আল্লাহ তাআলা বিড়ালকে সৃষ্টি করেছেন তাই ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল পোষা ভাল কাজ।
- বিড়ালকে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলা যায়।
- বিড়াল কখনো কাউকে কামড় দেই না,তাই কুকুরের সাথে কখনো বিড়ালকে তুলনা করা ঠিক না।
বিড়াল পালনের নিয়ম
সারাদিন বাইরে হাজার ব্যস্ততার সময় কাটিয়ে যখন রাত্রিবেলায় বাড়িতে আসেন, তখন যদি দেখতে পান আপনার পোষা বিড়ালটি লেজ নাড়িয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে তখন যেন মনের ভেতর আলাদা একটা শান্তি অনুভব করা যায়। এজন্য বিড়াল পোসারকথা ভাবলে কয়েকটি দায়িত্ব আমাদেরকে নিতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিড়াল পালনের নিয়ম সম্পর্কে-
বিড়ালের খাবার খাওয়ার পাত্রটি নিয়মিত পরিষ্কার করবেন। এবং সময় মত পাত্রটিতে পানি রাখবেন। বিড়াল খাবার নিয়ে বেশি জ্বালাতন করে না তার পছন্দের খাবারটি সবসময় খেতে চায়।
অনেকেই বাড়ির পোষা বিড়াল থেকে গাভীর দুধ খাওয়ান। কিন্তু এই দুধ অনেক ক্ষতি হতে পারে বিড়ালের জন্য। দীর্ঘদিন গাভীর দুধ খেলে ল্যাকটোজ থেকে পেটের নানান সমস্যা হয়।
বাড়িতে ছোট বিড়ালছানা আনলে অবশ্যই এক সপ্তাহের মধ্যে টিকা দিবেন। এবং দেড় থেকে দুই মাস বয়স হলে বিড়ালকে কৃমির ওষুধ খাওয়াবেন। বিড়ালের জন্য রেবিস এবং ট্রাইক্যাট এই টিকা দুটো দিতে হবে।
বিড়ালের মলত্যাগ করার জন্য নির্দিষ্ট লিটার বক্স রাখবেন। প্রত্যেকদিন সেই বক্সে মলত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে তুলবেন। এবং প্রতিদিন সেই বক্স পরিস্কার করার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।
বিড়ালের ঘুমানোর জন্য পার্সোনাল বেডের ব্যবস্থা করতে হবে। এমন বেড কিনবেন যেটি খুব সহজেই পরিষ্কার করা সম্ভব হয়,কেননা নিয়ম করে প্রতিদিন বেড পরিষ্কার করতে হবে।
বিড়াল যেমন অনেক সাতজনতা পছন্দ করেন। ঠিক তেমনি সে একা থাকতে পছন্দ করেন না। এজন্য সবসময়ই বাড়ির সদস্যদের মাঝে রাখার চেষ্টা করবেন।
শেষ কথাঃ
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বিড়াল পালনের নিয়ম সহ আরো বিভিন্ন তথ্য। পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল রাখা অনেক সুবিধাজনক। তারা সঙ্গী প্রদান করে,আপনার মানসিক চাপ কমিয়ে আপনার স্বাস্থ্য কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বিড়াল পোষা লোকদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কম থাকে।সুস্থ ও খুশি রাখতে বিড়ালকে প্রতিদিন যত্ন করতে হবে। তাদের পছন্দমত খাবার খেতে দিতে হবে। এবং নিয়মিত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টীকা গ্রহণ করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url