ভাতের মাড়ের ৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা
গ্রামের মানুষের কাছে ভাতের মাড় অতি পরিচিত একটি জিনিস। ভাতের মাড়ে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন ভাতের মাড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ভাতের মাড় দিয়ে কিভাবে নাইট ক্রিম তৈরি করতে হয়।
আপনি যদি ভাতের মাড়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে না জানেন তাহলে এই পোস্টে মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন ভাতের মাড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ভাতের মাড় দিয়ে নাইট ক্রিম কিভাবে তৈরি করবেন।
ভূমিকাঃ
ভাতের মার সাধারণত তিন ভাবে তৈরি করা হয়।ভাত রান্না করার সময় চাউল ফুটিয়ে মাড় সংরক্ষণ করা যায়।৩০ থেকে ৪০ মিনিট চাউলকে ভিজিয়ে রেখে চাউল ছেঁকে যে পানি পাওয়া যায়, সেটিকে মাড় হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।আপনি চাইলে ভাত থেকে পাওয়া মাড়কে দুই থেকে তিন দিন যত্ন করে রেখে সেটিকে ফার্মেন্টেটেড করে ব্যবহার করতে পারবেন।
স্বাস্থ্য এবং রূপচর্চার জন্য এই তিন প্রকার মাড় ব্যবহার করতে পারেন। তাই আজকে জানবো ভাতের মাড়ের যত সব উপকারিতা ও অপকারিতা।
ভাতের মাড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
বাঙালি জাতির সঙ্গে ভাত খুব নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের যেন ভাত ছাড়া দিন শুরু হয় না।কিন্তু ভাতের সঙ্গে গভীরভাবে যে বিষয়টা মিলে আছে তা আমরা জানিনা। সেটি হচ্ছে ভাতের মাড়।রান্না করার পর সাধারণত ভাতের মারটা ছেঁকে ফেলে দিই। কিন্তু আপনি জানেন কি ভাতের মারে যে পরিমাণ পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে না।
গবেষকরা বলেন শরীর ও ত্বক সুস্থ রাখতে ভাতের মাড়ের কোন তুলনা নেই।ভিটামিন ই খনিজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত উপাদান পাওয়া যায় ভাতের মারে।শরীরের গঠন ঠিক রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় দেয় ভাতের মার অনেক ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নেওয়া যায় ভাতের মাড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
ব্রণ কমায়ঃত্বকের ব্রণ ভালো করতে চাইলে প্রতিদিন দুইবার করে ভাতের মার ত্বকের ওপর লাগান।এতে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় খুব স্বাভাবিকভাবে ত্বকের ব্রণ কমাতে পারে।
ত্বক সুন্দর করেঃপ্রাকৃতিক ট্রলার বলতে পারেন ভাতের মারকে।গবেষকরা বলেন নিয়মিত মার মুখে মাসাজ করতে পারলে ত্বকের ছিদ্র এবং স্কিনে জমে থাকা ময়লা সরিয়ে খুব সহজেই ত্বক সুন্দর করে তুলে।
চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়ঃগোসলের আগে ভালো করে ভাতের মার চুলে লাগিয়ে নিন। কিছু সময় রেখে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এটি করার ফলে আপনার চুলে পুষ্টি জোগাবে এবং চুল পড়া সহ চুলের সকল রোগ ভালো করবে। সেই সাথে চুলের উজ্জ্বলতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃগবেষকরা বলেছেন বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি করতে চাইলে প্রতিদিন এক গ্লাস করে ভাতের মাড় খেতে পারেন।ফলে খুব সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে।
এনার্জীর ঘাটতি পূরণ করেঃভাতের মারে রয়েছে ৭ টি এমাইনো এসিড।এক গ্লাস ভাতের মার খেলে পেশি গঠনের জন্য অত্যন্ত ভূমিকা পালন করে। ভাতের মাড়ে কার্বোহাইড্রেট থাকায় শরীরের এনার্জির ঘাটতি দূর করে।
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক
যেকোনো জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি তার কিছু অপকারিতা রয়েছে। তাই ভাতের মাড়ের উপকারিতা ও রয়েছে এবং এর ক্ষতিকর দিক রয়েছে।এজন্য আপনাকে অবশ্যই দুই বিষয়েই বিস্তারিত জেনে রাখা উচিত। তাই চলুন এই পর্বে জেনে নেওয়া যাক ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিকগুলো।
- শরীরের চর্বি বৃদ্ধি পাওয়া।
- ডায়রিয়ার সমস্যা হওয়া।
- অতিরিক্ত মোটা হওয়া।
- শরীরে পুষ্টির সমস্যা।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুম হওয়া।
- কোলেস্টেরল মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।
ভাতের মাড় মুখে দিলে কি হয়
ভাতের মাড়ে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ান শক্তিশালী উপাদান। তাই ভাত রান্নার পর মাড় না ফেলে দিয়ে রোদে পোড়া দাগ ব্রণ টক টানটান করার কাজে ব্যবহার করতে পারেন।ভাতের মাড়ে রয়েছে মিনারেল এবং ভিটামিন যা ব্রণ দূর করতে অনেক কার্যকরী।প্রিয় বন্ধুগণ জেনে নিন ভাতের মাড় মুখে দিলে কি হয়?
ত্বকের দাগ দূর করতেঃভাতের মার একদিন রেখে দিন। মাড়ের সাথে এক কাপ পানি মিশিয়ে পাঁচ মিনিট গরম করুন। ঠান্ডা হলে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।এটি করলে ত্বকের দাগ দূর হবে।
বলে রেখা দূর করতেঃএক চামচ বেসন, এক চামচ ভাতের মাড়, আধা চামচ লেবুর রস এবং এক চিমটি হলুদ ভালো করে মিক্স করে ত্বকের ওপর ২৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে বলিরেখা দূর করবে।
ব্রণ দূর করতেঃএক চামচ লেবুর রস ও ৪ থেকে ৫ ফোটা অয়েল এবং এক চামচ ভাতের মাড় একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।তোলার সাহায্যে মিশ্রণটি ব্রণের ওপর লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এটি করতে পারলেব্রণ ভালো হবে।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতেঃএক চামচ ভাতের মাড় এবং এক চামচ আলুর রস একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।ত্বকের ওপর মিশ্রণটি ২০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন।এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন এতে করে ত্বকে রোদে পোড়া দাগ দূর করবে।
ভাতের মাড় দিয়ে চুলের যত্ন
বাঙ্গালীদের ভাত প্রধান খাদ্য হলেও, অনেকেই জানেনা ভাতের মার ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যে অনেক উপকারী। সুস্থ থাকার জন্য যেমন শরীরের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন ঠিক ত্বক এবং চুলের ও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।অনেকেই অনেক কিছু ব্যবহার করি চুলের যত্নে। কিন্তু আপনি কি ভাতের মাড় কখনো ব্যবহার করেছেন?চলুন জেনে নেওয়া যাক চুলের যত্নে ভাতের মাড় কিভাবে ব্যবহার করবেন।
- চুলে শ্যাম্পু করা হয়ে গেলে পানির সাথে ভাতের মাড় মিক্স করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন।মিশ্রণটি চুলে দেওয়ার পর চার থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন।এরপর ধুয়ে ফেলুন এতে করে চুলের নানান সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- পানির সাথে ভাতের মাড় মিশিয়ে গোসল করলে ত্বকের চুলকানি অস্বস্তিকর জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পাবেন।
ভাতের মাড় দিয়ে নাইট ক্রিম
ত্বকের বাক সরিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কে না চায়!ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য অনেকেই অনেক রকম প্রসাধনী ব্যবহার করে।কেউ বাজারে পাওয়া বিভিন্ন ফেসওয়াশ ব্যবহার করেন। কিন্তু ত্বকের যত্নে কার্যকরী ফল পাওয়া যায় না।তাই কাচের মত ত্বক পেতে ঘরোয়া টোটকায় ভাতের মাড় দিয়ে নাইট ক্রিম নিজেই তৈরি করুন।
ত্বকের যত্নে জাপানের মহিলারা ভাতকে অনেক গুরুত্ব দেন। চাউল ধোয়া পানি অথবা ভাতের মার ব্যবহার করেন।ভাতের মার ত্বক পরিচর্যা করার জন্য খুব উপকারী।চলুন জেনে আসি ভাতের মাড় দিয়ে নাইট ক্রিম কিভাবে তৈরি করবেন।
ভাতের মাড় কিংবা চাউল ধুয়ে যে পানি পাওয়া যায় তা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এজন্য ভাত থেকে মাড়কে আলাদা করে নিয়ে ১৫ থেকে ২০ ঘন্টা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিন। এরপর মাড়কে মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এমনভাবে লাগাবেন যাতে সমস্ত গুনাগুন ত্বকে যায়।
শেষ কথাঃ
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন ভাতের মাড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ভাতের মাড় দিয়ে কিভাবে নাইট ক্রিম বানানো সহ আরো বিভিন্ন তথ্য।কোরিয়ানদের মত উজ্জ্বল ফর্সা হওয়ার উপায় জানতে এই ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন।এই ওয়েবসাইটের আর্টিকেল পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ভাতের মাড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url